সাংখ্যমতে জগতের অভিব্যক্তি

সাংখ্যমতে জগতের অভিব্যক্তি


সাংখ্য দার্শনিকরা হলেন পরিণামবাদী। তাঁদের মতে জগৎ হলো প্রকৃতির পরিণাম। প্রকৃতি হলো জগতের উৎপত্তির প্রতি উপাদান কারণ। অর্থাৎজগৎ ও জগতের প্রত্যেক বস্তু ও বিষয়ের মূল কারণ প্রকৃতি। বলা হয়সৃষ্টির পূর্বে জগৎ প্রকৃতির মধ্যে অব্যক্ত অবস্থায় থাকে। পুরুষের সান্নিধ্যে প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ হওয়ার ফলে জগতের অভিব্যক্তি হয়। সাংখ্যমতে একেই জগতের সৃষ্টি বলা হয়। এই সৃষ্টির পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াও সাংখ্যশাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে।
 .
কিন্তু এখানে প্রশ্ন হলোপুরুষ এবং প্রকৃতির সম্বন্ধ কিভাবে সম্ভব কারণসাংখ্যমতে পুরুষ হলো চেতন এবং অকর্তা। অন্যদিকে প্রকৃতি হলো অচেতন এবং কর্তা। ফলে পুরুষ এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধ ধর্ম থাকায় উভয়ের ভেদ স্পষ্ট।
এর উত্তরে বলা হয়প্রকৃতি নিজেকে ভোগ করতে পারে না। আবার ভোক্তা না থাকলে ভোগ্য পদার্থের সার্থকতা নেই। পুরুষই ভোক্তা। এইজন্য প্রকৃতিকে পুরুষের প্রতীক্ষায় থাকতে হয়। যদিও সে পুরুষ থেকে ভিন্ন বা বিরুদ্ধ ধর্মবিশিষ্টতথাপি পুরুষই তার সার্থকতা সম্পাদন করে বলে সে পুরুষের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হতে ইচ্ছুক হয়।
 .
এখানেও প্রশ্ন আসেসাংখ্যমতে পুরুষ যেহেতু অসঙ্গ এবং উদাসীনসেহেতু সে প্রকৃতির সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হবে কিভাবে ?
উত্তরে সাংখ্য দার্শনিকরা বলেনপুরুষ কৈবল্য বা মুক্তির জন্য প্রকৃতি বা প্রধানের অপেক্ষা করে। সাংখ্য দর্শনে আধিদৈবিকআধিভৌতিক এবং আধ্যাত্মিক– এই ত্রিবিধ দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তিকেই কৈবল্য বা মুক্তি বলা হয়।
 .
কিন্তু প্রশ্ন হলোপুরুষ যেহেতু নিত্যমুক্তসেহেতু কৈবল্যের জন্য তার পক্ষে প্রকৃতির জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন কী ?
উত্তরে বলা হয়প্রকৃতি বা প্রধান পুরুষের ভোগ্য। অনাদিকাল হতে প্রধানের থেকে নিজের ভেদ বুঝতে না পারার জন্য আত্মা বা পুরুষ প্রকৃতি বা প্রধানের ত্রিবিধ দুঃখকে নিজের দুঃখ বলে মনে করে চলেছে। ফলে পুরুষ কৈবল্যের জন্য ভীষণভাবে আগ্রহশীল হয়।
 .
উল্লেখ্য যেসাংখ্যমতে প্রকৃতি পুরুষের অপেক্ষা করে এবং পুরুষ প্রকৃতির অপেক্ষা করেযেহেতু উভয়ের মধ্যে উপকার্যউপকারভাব সম্বন্ধ আছে। পুরুষ প্রকৃতির উপকার করে প্রকৃতির সার্থকতা সম্পাদন করে। পাশাপাশি প্রকৃতির স্বরূপস্থিত সুখদুঃখ ভোগ করে। প্রকৃতি তখন কৃতার্থ হয়। আবার প্রকৃতি পুরুষের উপকার করে। কিভাবে সুখদুঃখময়ী হয়েও সে পুরুষকে সুখের স্পর্শ অপেক্ষা অধিক দুঃখের তাপ প্রদান করে। তার ফলে পুরুষের কৈবল্যলাভের আকাক্সক্ষা প্রবল হয়। এই উপকার্যউপকারভাবটি বোঝাবার জন্য সাংখ্যকারিকাকার একবিংশ কারিকায় পঙ্গু এবং অন্ধ ব্যক্তির অপেক্ষার দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন
পুরুষস্য দর্শনার্থং কৈবল্যার্থং তথা প্রধানস্য।
পঙ্গ্বন্ধবদুভয়োরপি সংযোগস্তৎকৃতঃ সর্গঃ।।’– (সাংখ্যকারিকা২১)
অর্থাৎ পুরুষের মুক্তির জন্য এবং প্রধানের (তথা মূল প্রকৃতিরভোগের জন্য পঙ্গু ও অন্ধের মতো উভয়ের (অর্থাৎ পুরুষ ও প্রকৃতিরসংযোগ হয়। (পুরুষ ও প্রকৃতিরসংযোগবশত মহদাদি ব্যক্ত জগতের সৃষ্টি হয়।
 .
পঙ্গুর জ্ঞান আছেক্রিয়া নাই। অন্যদিকে অন্ধের ক্রিয়া আছেজ্ঞান নাই। অন্ধ যদি পঙ্গুকে বহন করতে ইচ্ছুক হয় এবং পঙ্গু যদি অন্ধকে চালনা করতে ইচ্ছুক হয়তাহলে উভয়েই গন্তব্যস্থানে উপস্থিত হতে পারে। অনুরূপভাবে পরস্পরের উপকারের জন্যই পুরুষ এবং প্রকৃতির সংযোগ হয়ে থাকে। এজন্যেই সাংখ্যকারিকার ছাপ্পান্ন নম্বর কারিকায় বলা হয়েছে
ইত্যেষ প্রকৃতিকৃতো মহাদাদিবিশেষভূতপর্য্যন্তঃ।
প্রতিপুরুষবিমোক্ষার্থং স্বার্থে ইব পরার্থ আরম্ভঃ।।’– (সাংখ্যকারিকা৫৬)
অর্থাৎ এইভাবে মহৎ থেকে (শুরু করেপঞ্চমহাভূত পর্য্যন্ত এই যে সৃষ্টি তা প্রত্যেক পুরুষের মুক্তির জন্য প্রকৃতি নিজের প্রয়োজনের মতই পরের (অর্থাৎ পুরুষেরপ্রয়োজনে সৃষ্টি করে।
 .
কৈবল্যপিপাসু পুরুষের উপকারের জন্যই প্রকৃতি মহৎতত্ত্বরূপে পরিণত হয়। মহৎতত্ত্ব হলো প্রকৃতির প্রথম পরিণাম এবং জগতের যাবতীয় বস্তুর বীজ।
 .
তবে তার আগে প্রশ্ন হলোপ্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ ভোগ ও কৈবল্যের হেতু হলে মহৎ প্রভৃতি সৃষ্টির প্রতি হেতু কে ?
উত্তরে বলা হয়ভোগ ও কৈবল্য– এই দুটি হলো পুরুষার্থ। প্রকৃতির সঙ্গে পুরুষের সংযোগ হলেই ভোগ ও কৈবল্য হয় না। প্রকৃতির পরিণামবশত বুদ্ধি বা মহৎ প্রভৃতি সৃষ্টি হলে তবেই ভোগ সম্ভব হয়। অন্তঃকরণের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত সুখদুঃখই ভোগ্য হয়। সুতরাং ভোগের জন্য মহৎ প্রভৃতির সৃষ্টি প্রয়োজন। আবার জ্ঞান হলো অন্তঃকরণের বৃত্তি। তত্ত্বজ্ঞান বা পুরুষ ও প্রকৃতির ভেদের জ্ঞান না হলে কৈবল্য হয় না। সুতরাং কৈবল্যের জন্যও মহৎ প্রভৃতি সৃষ্টি প্রয়োজন। তাই সাংখ্যকারিকার সাঁইত্রিশ নম্বর কারিকায় বলা হয়েছে
সর্ব্বং প্রত্যুপভোগং যস্মাৎপুরুষস্য সাধয়তি বুদ্ধিঃ।
সৈব চ বিশিনষ্টি পুনঃ প্রধানপুরুষান্তরং সূক্ষ্মম্ ।।’– (সাংখ্যকারিকা৩৭)
অর্থাৎ যেহেতু মহৎ বা বুদ্ধি সংসারদশায় পুরুষের সমস্ত ভোগ সাধন করে, (সেহেতুসেই বুদ্ধিই পুনরায় মোক্ষদশায় প্রধান ও পুরুষের দুর্বিজ্ঞেয় ভেদ বিশেষভাবে প্রকাশ করে।
 .
অতএব স্বীকার করতে হবে যেপ্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগের ফলে মহৎ প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। এর দ্বারাই পুরুষের ভোগ এবং অপবর্গ সিদ্ধ হয়ে থাকে।
 .
বস্তুত প্রকৃতি একটি ক্ষণেও স্থির থাকে না। প্রতিক্ষণেই তার নিয়ত বা নিয়মিত পরিণতি হয়ে চলেছে। প্রলয়কালেও তার পরিণামপ্রাপ্তি অব্যাহত থাকে। কিন্তু ঐ সময়ে প্রকৃতির স্বরূপভূত সত্ত্বরজঃ ও তমঃ এই তিনটি গুণের তারতম্য হয় না বলে ঐ পরিণামের ফলে অন্য কোন তত্ত্ব প্রকাশিত হয় না। এইজন্য এই পরিণামকে বলা হয় স্বরূপপরিণাম। কিন্তু যখন সৃষ্টির সময় উপস্থিত হয়অর্থাৎ প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগ ঘটলে প্রকৃতির মধ্যে তুমুল আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এর ফলে রজঃ সত্ত্ব ও তমোগুণের ক্রিয়া আরম্ভ হয়। রজোগুণ চঞ্চল বলে প্রথমে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং পরে সত্ত্ব ও তমোগুণের ক্রিয়া আরম্ভ হয়। মোটকথাসৃষ্টির সময় প্রকৃতির স্বরূপভূত তিনটি গুণের তারতম্য হওয়ায় যে পরিণাম হয়তাকে বলা হয় রিরূপপরিণাম। প্রকৃতির প্রথম বিরূপপরিণাম হলো মহৎতত্ত্ব। সাংখ্যকারিকার ঈশ্বরকৃষ্ণ দ্বাবিংশ কারিকায় প্রকৃতির পরিণাম হিসেবে সৃষ্টির যে ক্রম উল্লেখ করেছেন তা হলো
প্রকৃতের্মহাংস্ততোহহঙ্কারস্তস্মাদ্গণশ্চ ষোড়শকঃ।
তস্মাদপি ষোড়শকাৎ পঞ্চভ্যঃ পঞ্চভূতানি।। (সাংখ্যকারিকা২২)
অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে মহৎমহৎ থেকে অহঙ্কারঅহঙ্কার থেকে (মনপঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় ও পঞ্চতন্মাত্র– এইষোলটি গণ (বা বিকারএবং ষোলটি বিকারের অন্তর্গত পঞ্চতন্মাত্র থেকে (আকাশাদিপঞ্চমহাভূত (উৎপন্ন হয়)
 .
তবে কারিকাটিতে একবাক্যে এই জগত সৃষ্টির ক্রম উল্লেখ করা হলেও সাংখ্যশাস্ত্রে এর সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিস্তৃত ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রকৃতির প্রথম পরিণাম যে মহৎতত্ত্বএই মহৎতত্ত্বেরই নামান্তর হলো মহানবুদ্ধি ইত্যাদি। একে মহান বলা হয় কারণ সকল উৎপন্ন পদার্থের মধ্যে এই পদার্থটি মহাপরিমাণযুক্ত। বুদ্ধি বলা হয় এজন্যে যেবুদ্ধি নিজেকে যেমন প্রকাশ করে তেমনি অন্যকেও প্রকাশ করে। সাংখ্যমতে প্রথম ব্যক্ত বুদ্ধির লক্ষণ হলো অধ্যবসায়। সাংখ্যকারিকার ত্রয়োবিংশ বা তেইশ কারিকায় বলা হয়েছে
অধ্যবসায়ো বুদ্ধির্ধর্ম্মো জ্ঞানং বিরাগ ঐশ্বর্য্যম্ ।
সাত্ত্বিকমেতদ্রূপং তামসমস্মাদ্বিপর্য্যস্তম্ ।।’– (সাংখ্যকারিকা২৩)
অর্থাৎ অধ্যবসায় (তথা অন্তঃকরণের নিশ্চয়াত্মক বৃত্তিহলো বুদ্ধি। ধর্মজ্ঞানবৈরাগ্য ও (অনিমা ইত্যাদিঐশ্বর্য্য বুদ্ধির সাত্ত্বিক রূপ। এই ধর্মাদির বিপরীত– অধর্মঅজ্ঞানঅবৈরাগ্য ও অনৈশ্বর্য্যরূপ চারটি অস˜গুণ বুদ্ধির তামস রূপ।
 .
এই কারিকা অনুযায়ীপ্রথম ব্যক্ত বুদ্ধির লক্ষণ হলো অধ্যবসায়। যদিও অধ্যবসায় বুদ্ধির ব্যাপার বা বুদ্ধির ধর্মমাত্রবুদ্ধির স্বরূপ নয়তবুও অধ্যবসায়রূপ ব্যাপার বা ধর্মের দ্বারা বুদ্ধির লক্ষণ চিহ্নিত হয়। বুদ্ধির বিশেষ ধর্ম হলো নিশ্চয়বস্তুর স্বরূপ নিশ্চয় করা যায় জ্ঞান বুদ্ধির দ্বারা। ‘এইটি আমার কর্তব্য’ এরকম নিশ্চয়ই অধ্যবসায় পদবাচ্য। প্রকৃতি যেমন ত্রিগুণের সাম্যাবস্থাপ্রকৃতি থেকে প্রথম উৎপন্ন বুদ্ধি বা মহৎও ত্রিগুণাত্মক। প্রকৃতির যেমন পরিণাম হয়বুদ্ধিরও তেমনই পরিণাম হয়।
 .
মহৎ থেকে অহঙ্কার উৎপন্ন হয়। অহঙ্কার হলো প্রকৃতির দ্বিতীয় পরিণাম। ‘আমি’ ও ‘আমার’ এই দুটি বোধ অহঙ্কারের প্রধান লক্ষণ। সাংখ্যকারিকাকার ঈশ্বরকৃষ্ণ চতুর্বিংশ বা চব্বিশ নম্বর কারিকায় অহঙ্কারের লক্ষণ এবং অহঙ্কার থেকে উৎপন্ন দু’প্রকার তত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন
অভিমানোহহঙ্কারস্তস্মাদদ্বিবিধঃ প্রবর্ত্ততে সর্গঃ।
একাদশকশ্চ গণস্তন্মাত্রপঞ্চকশ্চৈব।।’– (সাংখ্যকারিকা২৪)
অর্থাৎ অন্তঃকরণের অভিমানাত্মক বৃত্তি অহঙ্কার। অহঙ্কার থেকে দুই প্রকার সৃষ্টি হয়– একাদশ ইন্দ্রিয় এবং পঞ্চতন্মাত্র।
 .
পঞ্চতন্মাত্র হলো– শব্দস্পর্শরূপরস ও গন্ধ। আর একাদশ ইন্দ্রিয় হলো– পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় ও অন্তরেন্দ্রিয় মন। সাংখ্যকারিকার ছাব্বিশ নম্বর কারিকায় জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে
বুদ্ধীন্দ্রিয়াণি চক্ষুঃশ্রোত্রঘ্রাণরসনত্বগাখ্যানি।
বাক্পাণিপাদপায়ুপস্থানি কর্মেন্দ্রিয়াণ্যাহুঃ।।’– (সাংখ্যকারিকা২৬)
অর্থাৎচক্ষুকর্ণনাসিকাজিহ্বা ও ত্বক্– এই পাঁচটিকে জ্ঞানেন্দ্রিয় বলে এবং বাক্পাণিপাদপায়ু ও উপস্থ (যোনি)- এই পাঁচটিকে কর্মেন্দ্রিয় বলে।
 .
মহৎএর মতো অহঙ্কারও ত্রিগুণাত্মক। তবে সাংখ্যশাস্ত্রে অহঙ্কারের অন্তর্গত ত্রিগুণের পৃথক পৃথক নামকরণ করা হয়েছে। এ থেকে অহঙ্কার তিনপ্রকারও বলা যায়। অহঙ্কারে সত্ত্ব গুণের প্রাধান্য ঘটলে সাত্ত্বিক অহঙ্কাররজোগুণের আধিক্য ঘটলে রাজসিক অহঙ্কার এবং তমোগুণের আধিক্য ঘটলে তামসিক অহঙ্কারের সৃষ্টি হয়। সাংখ্যমতেঅহঙ্কারের সাত্ত্বিকভাগকে বৈকারিক বা বৈকৃতরাজসভাগকে তৈজস এবং তামসভাগকে ভূতাদি বলা হয়েছে। সাংখ্যকারিকার পঁচিশ নম্বর কারিকায় বলা হয়েছে
সাত্ত্বিকঃ একাদশকঃ প্রবর্ত্ততে বৈকৃতাদহঙ্কারাৎ।
ভূতাদেস্তন্মাত্রঃ স তামসস্তৈজসাদুভয়ম্ ।।’– (সাংখ্যকারিকা২৫)
অর্থাৎ বৈকৃত নামক সাত্ত্বিক অহঙ্কার থেকে সাত্ত্বিক একাদশ ইন্দ্রিয় উৎপন্ন হয়। ভূতাদি নামক তামস অহঙ্কার থেকে সেই তামসিক পাঁচটি তন্মাত্র উৎপন্ন হয়। তৈজস বা রাজস অহঙ্কার থেকে ইন্দ্রিয় ও তন্মাত্র উভয়েই উৎপন্ন হয়।
 .
মোটকথাসাংখ্যমতে অহঙ্কার থেকে ষোলটি তত্ত্ব উৎপন্ন হয়। সাত্ত্বিক অহঙ্কার থেকে চক্ষুকর্ণনাসিকাজিহ্বা ও ত্বক এই পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয় এবং হাতপাপায়ুমুখ ও উপস্থ বা জননেন্দ্রিয় এই পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় ও মনের আবির্ভাব হয়। আর তামসিক অহঙ্কার থেকে উদ্ভব হয় পঞ্চ তন্মাত্রের।
 .
এখানে প্রশ্ন হতে পারেঅহঙ্কারের অন্তর্গত রজো গুণ যদি কোন তত্ত্ব উৎপন্ন না করেতাহলে অহঙ্কারকে ত্রিগুণাত্মক বলা যাবে কিভাবে ?
এর উত্তর হলোরজোগুণ না থাকলে সত্ত্বগুণের ও তমোগুণের কার্যকরতা সম্ভব নয়। কারণ সত্ত্বগুণ এবং তমোগুণ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। সুতরাং যদিও রজো গুণকে সাক্ষাৎভাবে কারণ বলা যায় নাতথাপি সত্ত্ব ও তমোগুণের ক্রিয়া উৎপাদন করে বলে রজো গুণও ঐ সকল কার্যের প্রতি কারণ হয়। অর্থাৎ উক্ত উভয়প্রকার কার্যের উৎপত্তিতে রজোগুণ হলো নিমিত্তকারণ।
 .
একাদশ ইন্দ্রিয় মন হলো উভয়াত্মক। মন জ্ঞানেন্দ্রিয়ের কার্যের যেমন সহায়ক হয়কর্মেন্দ্রিয়ের কার্যেরও সহায়ক হয়। অর্থাৎ মনের সাহায্য না পেলে জ্ঞানেন্দ্রিয় জ্ঞান উৎপাদন করতে পারে না। আবার মনের সাহায্য না পেলে কর্মেন্দ্রিয়ও কর্মসাধনে সমর্থ হয় না। এইজন্য সাতাশ নম্বর কারিকায় মনকে উভয় ইন্দ্রিয়স্বরূপ বলা হয়েছে
উভয়াত্মকমত্র মনঃ সংকল্পকমিন্দ্রিয়ঞ্চ সাধর্ম্ম্যাৎ।
গুণপরিণামবিশেষান্নানাত্বং বাহ্যভেদাশ্চ।।’– (সাংখ্যকারিকা২৭)
অর্থাৎমন উভায়ত্মক ও সঙ্কল্পাত্মক। ইন্দ্রিয়ের সমানধর্মবশত (জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের মত মনও সাত্ত্বিক অহঙ্কার থেকে উৎপন্ন বলেমনও ইন্দ্রিয়। গুণত্রয়ের পরিণামবিশেষহেতু ইন্দ্রিয় নানা এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শব্দাদি বাহ্য বিষয়গুলিও বহু।
 .
সাংখ্যকারিকায় ইন্দ্রিয়গুলি বৃত্তি বা কার্য সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে
শব্দাদিষু পঞ্চানামালোচনমাত্রমিষ্যতে বৃত্তিঃ।
বচনাদানবিহরণোৎসর্গানন্দাশ্চ পঞ্চানাম্ ।।’– (সাংখ্যকারিকা২৮)
অর্থাৎ শব্দস্পর্শরূপরস ও গন্ধ বিষয়ে পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়ের বৃত্তি আলোচনজ্ঞান বা নির্বিকল্পক জ্ঞান মাত্র এবং বচনআদান (গ্রহণ), বিহরণ (গমন), উৎসর্গ (মলাদিত্যাগও আনন্দ (স্ত্রীসম্ভোগরূপ সন্তোষপঞ্চকর্মেন্দ্রিয়ের বৃত্তি– এটাই সাংখ্য স্বীকৃত।
 .
সহজকথায়পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় যথা– চক্ষুকর্ণনাসিকাজিহ্বা ও ত্বক্ এরা যথাক্রমে রূপশব্দগন্ধরস ও স্পর্শ উপলব্ধি করে। আর পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় যথা– হাতপাপায়ুমুখ ও জননেন্দ্রিয়ের বৃত্তি হলো গ্রহণগমনত্যাগকথন ও জনন প্রত্যক্ষ করা। সাংখ্যমতে ইন্দ্রিয় বলতে ইন্দ্রিয়ের অন্তঃস্থিত অপ্রত্যক্ষ শক্তিকে বোঝায়। প্রত্যক্ষগোচর শরীরের বহির্দেশে অবস্থিত ইন্দ্রিয়গুলি বোঝায় না।
 .
ইন্দ্রিয়গুলি শরীর নয়শরীরাশ্রিত। বুদ্ধি বা জ্ঞানের সাধন ইন্দ্রিয়কে বুদ্ধিন্দ্রিয় বা জ্ঞানেন্দ্রিয় বলা হয়। কর্মের সাধন ইন্দ্রিয়কে বলা হয় কর্মেন্দ্রিয়। বাচস্পতি মিশ্রের মতে জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং কর্মেন্দ্রিয় উভয়ই ইন্দ্রিয়ের বা আত্মার চিহ্ন হওয়ায় ইন্দ্রিয় পদবাচ্য হয়। তবে ন্যায়বৈশেষিক দার্শনিকরা কর্মেন্দ্রিয় স্বীকার করেন না। কারণতাদের মতে যা জ্ঞানের করণ তাই ইন্দ্রিয়। তাই সাংখ্যমে ইন্দ্রিয় একাদশটি হলেও ন্যায়বৈশেষিক মতে ইন্দ্রিয় সংখ্য ছয়টি।
 .
সাংখ্যমতে তামস অহঙ্কার থেকে পঞ্চ তন্মাত্রের আবির্ভাব হয়। এই পঞ্চ তন্মাত্র পাঁচ রকমের অনুভূতি যথা– রূপরসগন্ধস্পর্শ ও শব্দএর সূক্ষ্ম উপাদান। তন্মাত্রগুলি অত্যন্ত সূক্ষ্মতাই তাদের প্রত্যক্ষ করা যায় না। কিন্তু তাদের অস্তিত্বকে অনুমান করা যায়। পঞ্চ তন্মাত্র থেকে পঞ্চ মহাভূত যথা– ক্ষিতিঅপতেজমরুৎ ও ব্যোম বা আকাশের সৃষ্টি। সাংখ্যকারিকার আটত্রিশ নম্বর কারিকায় বলা হয়েছে
তন্মাত্রাণ্যবিশেষাস্তেভ্যো ভূতানি পঞ্চ পঞ্চভ্যঃ।
এতে স্মৃতা বিশেষাঃ শান্তা ঘোরাশ্চ মূঢ়াশ্চ।।’– (সাংখ্যকারিকা৩৮)
অর্থাৎ : (শব্দস্পর্শরূপরস ও গন্ধ– এই পাঁচটিতন্মাত্রকে অবিশেষ (বা সূক্ষ্ম ভূতবলে। সেই পাঁচটি (তন্মাত্রথেকে (ক্ষিতিঅপ্তেজমরুৎ ও ব্যোম– এইপাঁচটি স্থূলভূত উৎপন্ন হয়। এই পাঁচটি স্থূলভূত (সত্ত্বরজঃ ও তমঃ গুণাত্মক বলে এদেরসুখদুঃখ ও মোহস্বভাব বলা হয়।
 .
পঞ্চতন্মাত্র থেকে যে পঞ্চমহাভূতের সৃষ্টি হয়সাংখ্য দর্শনে এই কারিকাটির একাধিক ব্যাখ্যা দেখা যায়। প্রচলিত ব্যাখ্যানুযায়ী সাংখ্য দার্শনিকরা বলেনশব্দতন্মাত্র থেকে ব্যোম বা আকাশশব্দতন্মাত্র ও স্পর্শতন্মাত্র থেকে মরুৎ বা বায়ুশব্দস্পর্শরূপ তন্মাত্র থেকে তেজশব্দস্পর্শরূপরস তন্মাত্র থেকে অপ্ বা জল এবং শব্দস্পর্শরূপরসগন্ধ তন্মাত্র থেকে ক্ষিতি বা পৃথিবী উৎপন্ন হয়।
 .
এ প্রেক্ষিতে কোন কোন সাংখ্যদার্শনিক যেমন যুক্তিদীপিকাকার বলেছেন যেএক একটি তন্মাত্র থেকে এক একটি স্থূলভূত উৎপন্ন হয়। আকাশ যেমন শব্দতন্মাত্র থেকে উৎপন্ন হয়তেমনি বায়ুতেজজল ও পৃথিবী উৎপন্ন হয় যথাক্রমে স্পর্শতন্মাত্ররূপতন্মাত্ররসতন্মাত্র ও গন্ধতন্মাত্র থেকে। এক্ষেত্রে বায়ু প্রভৃতির সৃষ্টিতে অন্য তন্মাত্রের অনুপ্রবেশ হয় না। ফলে কার্যকারণভাব সুসঙ্গত হয়।
 .
কিন্তু সাংখ্যদর্শনের অন্যান্য আচার্য্যদের মতেবস্তুস্থিতির উপপাদনের জন্য হেতুরূপে অন্য তন্মাত্রের অনুপ্রবেশ স্বীকার করা প্রয়োজন। কারণ উপাদানকারণের গুণ কার্যে উপলব্ধি হয়। তাই উপাদানসংশ্লিষ্ট তন্মাত্রের কারণেই আকাশে শব্দবায়ুতে শব্দ স্পর্শতেজে শব্দ স্পর্শ রূপজলে শব্দ স্পর্শ রূপ রস এবং পৃথিবীতে শব্দ স্পর্শ রূপ রস গন্ধ এই গুণগুলির উপলব্ধি হয়।
 .
সাংখ্য দার্শনিকরা স্থূল মহাভূতের একাধিক গুণ আছে বলে স্বীকার করলেও ন্যায়মতে প্রত্যেকটি মহাভূতের জন্য একটি করে গুণ স্বীকার করা হয়।
 .
সাংখ্যমতে স্থূল ভূতগুলি শান্ত ঘোর এবং মূঢ় হওয়ার জন্যই বিশেষত্ব বিশিষ্ট হয়। অর্থাৎ আকাশ প্রভৃতি স্থূল ভূতগুলি উক্ত তিনপ্রকার হলেও সকলের কাছে সমভাবে প্রতীত হয় না। কতকগুলি সত্ত্বগুণপ্রধানকতকগুলি রজোগুণপ্রধান এবং কতকগুলি তমোগুণপ্রধান। শান্তভূতগুলি সুখপ্রকাশ এবং লঘু। এগুলি সুখময় হওয়ায় সন্নিকৃষ্ট পুরুষকে সুখী করে। প্রকাশময় হওয়ায় পুরুষের নিকট স্বচ্ছভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করে। আবার লঘু হওয়ায় দ্রুতগতি উর্ধ্বগতি প্রভৃতির আশ্রয় হয়ে থাকে। এইভাবে শান্তত্ববিশিষ্ট ভূতগুলি উপভোগ্য হয়।
 .
কিন্তু ঘোর ভূতগুলি দুঃখময় ও অনবস্থিত। রজোগুণ পরিস্ফুট হওয়ায় সে সন্নিকৃষ্ট পুরুষকে দুঃখী করে এবং অনবস্থিতচঞ্চল বা ক্রিয়াশীল হয়। এইভাবে ঘোরত্ববিশিষ্ট গুণগুলি উপভোগ্য হয়।
আবার মূঢ় ভূতগুলি বিষণ্নও গুরু। বিষাদময় হওয়ায় সন্নিকৃষ্ট পুরুষকে মুগ্ধ করে এবং গুরু হওয়ায় সত্ত্ব ও রজোগুণের সতত কার্যকারিতায় প্রতিবন্ধক হয়। এইভাবে ভূতগুলি পরস্পর ভিন্ন হয়ে প্রতীয়মান হয়। বলাবাহুল্য যে এইরূপ উপভোগযোগ্যতারূপ বিশেষ না থাকায় তন্মাত্রগুলিকে অবিশেষ এবং সূক্ষ্ম বলা হয়।
 .
সাংখ্যমতে সৃষ্টিকে সর্গ বলা হয়েছে। সর্গ দু’প্রকার যথা– প্রত্যয়সর্গ বা বুদ্ধি সর্গ এবং তন্মাত্র সর্গ বা ভৌতিক সর্গ। প্রত্যয় সর্গ বা বুদ্ধি সর্গের আওতাভুক্ত হলো মহৎঅহঙ্কারপঞ্চ ইন্দ্রিয়পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় ও উভয়েন্দ্রিয় মন এই তেরোটি পরিণাম। আর তন্মাত্র সর্গ বা ভৌতিক সর্গের আওতায় পড়ে পঞ্চ তন্মাত্রপঞ্চ মহাভূত এবং মহাভূত হতে উৎপন্ন সকল দ্রব্য। পঞ্চতন্মাত্র অতীন্দ্রিয় বলে তা ‘অবিশেষ’ নামে পরিচিত। অন্যদিকে পঞ্চমহাভূত ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট দ্রব্যগুলিকে ‘বিশেষ’ বলা হয়। সাংখ্যকারিকায় বলা হয়েছে
সূক্ষ্মা মাতাপিতৃজাঃ সহ প্রভূতৈস্ত্রিধা বিশেষাঃ স্যুঃ।
সূক্ষ্মাস্তেষাং নিয়তা মাতাপিতৃজা নিবর্ত্তন্তে।।’– (সাংখ্যকারিকা৩৯)
অর্থাৎ বিশেষ তিন প্রকার (যথা-) সূক্ষ্মশরীরমাতাপিতা থেকে জাত স্থূলশরীর ও পাঁচটি মহাভূত। এদের মধ্যে সূক্ষ্মশরীর প্রলয়কাল পর্যন্ত (আপেক্ষিকনিত্যস্থূলশরীর (কিছুদিন থেকেনষ্ট হয়।
 .
সাংখ্যমতে সৃষ্টি বলতে প্রলয়ের পর প্রথম সৃষ্টি বোঝানো হয়। সৃষ্টির পরে প্রলয় হয় এবং প্রলয়ের পর সৃষ্টি হয়। এইভাবে এই প্রবাহ অনাদিকাল থেকে চলে আসছে। প্রলয়ের পর যখন সৃষ্টি আরম্ভ হয়তখন সূক্ষ্মশরীর নির্মিত হয়। তখন হতে আরম্ভ করে মহাপ্রলয় পর্যন্ত এই সূক্ষ্মশরীর বর্তমান থাকে।
 .
প্রশ্ন হতে পারে যেপ্রকৃতি ও পুরুষ উভয়ই যেহেতু নিত্য সেহেতু প্রকৃতি ও পুরুষের সংযোগও নিত্য। ফলে সর্বদা কেবল সৃষ্টি হওয়ায়প্রলয়ব্যবস্থার উচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী।
উত্তরে সাংখ্যকারিকাকার ঈশ্বরকৃষ্ণ উনষাট নম্বর কারিকায় বলেছেন
রঙ্গস্য দর্শয়িত্বা নিবর্ত্ততে নর্ত্তকী যথা নৃত্যাৎ।
পুরুষস্য তথাত্মানং প্রকাশ্য বিনিবর্ত্ততে প্রকৃতিঃ।।’– (সাংখ্যকারিকা৫৯)
অর্থাৎ নর্তকী যেমন দর্শকগণকে নৃত্য দেখিয়ে নৃত্য থেকে নিবৃত্ত হয়প্রকৃতিও সেইরূপ পুরুষের সামনে নিজের স্বরূপ প্রকাশ করে (সৃষ্টি ব্যাপার থেকেনিবৃত্ত হয়।
 .
সুতরাংসাংখ্যাচার্যের মতেসৃষ্টির ন্যায় প্রলয়ও সম্ভব। আর জগৎকার্যরূপ সৃষ্টির কারণও সাংখ্যকারিকার আটান্ন নম্বর কারিকায় দৃষ্টান্ত দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে
ঔৎসুক্যনিবৃত্ত্যর্থং যথা ক্রিয়াসু প্রবর্ত্ততে লোকঃ।
পুরুষস্য বিমোক্ষার্থং প্রবর্ত্ততে তদ্বদব্যক্তম্ ।।’– (সাংখ্যকারিকা৫৮)
অর্থাৎ লোকে যেমন কৌতুহল বা আগ্রহ নিবৃত্তির জন্য কার্যে প্রবৃত্ত হয়তেমনি প্রকৃতিও পুরুষের মোক্ষের জন্য কার্যে প্রবৃত্ত হয়।
 .
এই কার্যই হলো সৃষ্টি। বস্তুত সাংখ্যদর্শনের অভিব্যক্তিবাদ সৎকার্যবাদেও উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তাই এই মতে উৎপত্তি নতুন কোন সৃষ্টি নয়কেবল অব্যক্তের ব্যক্ত হওয়া। আবার বিনাশ কখনোই পরিপূর্ণ বিনাশ নয়কেবল ব্যক্তের অব্যক্তে বিলীন হওয়া।
 .
সাংখ্যমতে প্রকৃতির জগৎ সৃষ্টির উদ্দেশ্য দ্বিবিধ। পুরুষের ভোগ এবং পুরুষের মুক্তি। যদিও পুরুষ স্বরূপত ভোক্তা নয়তবুও বুদ্ধি বা মহৎ স্বগত সুখ এবং দুঃখরূপ ভোগকে পুরুষে প্রতিবিম্বিত করে। এইভাবে পুরুষে ভোক্তৃত্ব উৎপন্ন হয়। আবার পুরুষ এবং প্রকৃতির ভেদজ্ঞান বা বিবেকখ্যাতি উৎপন্ন কওে প্রকৃতি পুরুষের মুক্তিসাধন করে। অর্থাৎ প্রকৃতির সৃষ্টির ফলে পুরুষ ভোগ কওে এবং পুরুষের ভোগের ফলে পুরুষের মুক্তি বা কৈবল্য সম্ভব হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রকৃতির সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে উদ্দেশ্যমূলক বলা যায়। এই অভিব্যক্তি প্রক্রিয়া কোন আকস্মিক ঘটনা নয়।
 .
অপরিণামী পুরুষের সান্নিধ্যে প্রকৃতির চব্বিশটি তত্ত্বেও সাহায্যে সাংখ্য দার্শনিকরা এভাবেই জগতের অভিব্যক্তি বর্ণনা করেছেন।
নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال