বার্হস্পত্য-সূত্র

বার্হস্পত্য-সূত্র

ভারতীয় দর্শন বা প্রাচীন সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বৃহস্পতি-সূত্র নাম দিয়ে যে সূত্রগুলি ব্যবহার করা হয় তার স্পষ্ট উৎস আমাদের কাছে অজ্ঞাত এখনো। অথচ ভারতীয় দার্শনিক প্রথা বা ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতিটা দর্শনেরই একেকটি সূত্রগ্রন্থ থাকলেও যে সূত্রগুলির উপর ভিত্তি করে চার্বাক দর্শন নামে একটা প্রতিপত্তিশালী শক্ত দর্শন দাঁড়িয়ে আছে, ভারতীয় দর্শন-রীতিতে তারও একটা সূত্রগ্রন্থ থাকার কথা ছিলো, যার প্রণেতা হয়তো বৃহস্পতি নামের কেউ। কিন্তু সেরূপ গ্রন্থ আদৌ ছিলো কি ছিলো না, তা নিয়েও দার্শনিক মহলে যথেষ্ট বিতর্ক রয়ে গেছে।
 .
তবে অন্যতম পরোক্ষ উৎস হিসেবে চতুর্দশ শতকের বেদান্ত দার্শনিক সায়ণমাধবাচার্যের যে বিখ্যাত গ্রন্থটির বিস্তৃত পূর্বপক্ষ বয়ান থেকে চার্বাক দর্শনের বিশিষ্ট রূপটিকে অনুমান করা সহজসাধ্য হয়ে ওঠে, সেই ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’ গ্রন্থেও মাধবাচার্য প্রধানত চার্বাক-ষষ্ঠিকে অবলম্বন করেই চার্বাক-দর্শন সংকলন করেছেন। প্রায়ক্ষেত্রেই তিনি চার্বাক-ষষ্ঠির বচনকেই প্রমাণরূপে প্রদর্শন করেছেন, কোথাও বার্হস্পত্য-সূত্রের উল্লেখ করেন নি। এতে করে পণ্ডিতদের ধারণা, তিনি অন্যান্য কোন কোন গ্রন্থে বার্হস্পত্য-সূত্র দেখে থাকলেও সম্পূর্ণ বার্হস্পত্য সূত্র দেখেন নি অর্থাৎ বার্হস্পত্য-সূত্র নামের কোন গ্রন্থের খোঁজ তিনি পান নি। এবং গ্রন্থশেষে তিনি ‘তদেতৎ সর্বং বৃহস্পতিনাপ্যুক্তং’ বলে চার্বাকষষ্ঠির শ্লোকাকার বচনগুলির উল্লেখ করেছেন। বৃহস্পতি সূত্রাকারে চার্বাকমত বললেও শ্লোকাকারে বলেন নি। তবে চার্বাক-ষষ্ঠি যে বৃহস্পতির সূত্র অবলম্বনে রচিত, এ ব্যাপারে পণ্ডিতেরা মোটামুটি নিঃসন্দেহই বলা যায়। এবং নানান প্রাচীন গ্রন্থে ভারতীয় দর্শনের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের অনুসরণে সৃষ্ট এরূপ কোন কোন সূত্রের উল্লেখ থেকে অনুমান হয়, বার্হস্পত্য-সূত্র অতি প্রাচীন। (সূত্র: চার্বাক-দর্শনম্ /শ্রীপঞ্চানন শাস্ত্রী)।
 .
চার্বাক বা বার্হস্পত্য দর্শনসংশ্লিষ্ট কোন সূত্রগ্রন্থের অস্তিত্ব এখনো অজ্ঞাত হলেও অতীতে কোন এককালে এরকম সূত্রগ্রন্থ থাকার সম্ভাব্যতাকে অস্বীকারও করা যায় না। কেননা প্রখ্যাত ব্যাকরণকার পাণিনির (আনুমানিক ৬০০-৪০০ খ্রীস্টপূর্ব) কালজয়ী ব্যাকরণসূত্র ‘অষ্টাধ্যায়ী’র ভাষ্যকার পতঞ্জলির (আনুমানিক অন্যুন ১৫০ খ্রীস্টপূর্ব) ‘মহাভাষ্যে’ ‘ভাগুরি’ নামে লোকায়তের এক ‘বর্তিকা’ বা ভাষ্যের উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে- ‘বর্ণিকা ভাগুরী লোকায়তস্য, বর্তিকা ভাগুরী লোকায়তস্য’ (মহাভাষ্য: ৭/৩/১)। অর্থাৎ ভাগুরী লোকায়তের বর্ণিকা বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ। মূলগ্রন্থ ছাড়া কোন ভাষ্যগ্রন্থের অস্তিত্ব অনুমান কঠিন বলেই মহাভাষ্যের সাক্ষ্য অনুযায়ী লোকায়তের কোন গ্রন্থ ও তার ভাষ্য ছিলো বলেই অনুমান করা হয়। এছাড়া বৌদ্ধদের লেখা সংস্কৃত গ্রন্থ (অনুমান সম্রাট অশোকের কিছুটা পরবর্তীকালের) ‘দিব্যাবদানে’ও লোকায়ত শাস্ত্রের মূল গ্রন্থের উপর লেখা ভাষ্য ও প্রবচনের উল্লেখ রয়েছে- ‘লোকায়তং ভাষ্যপ্রবচনম্’ (দিব্যাবদান, পৃষ্ঠা ৬৩০) উদ্ধৃতিতে।
 .
জীবনের দীর্ঘকাল ব্যাপী চার্বাক বা লোকায়ত নিয়ে একনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান ও আলোচনায় রত থাকা প্রখ্যাত ভারতীয় সংস্কৃতিবিদ পণ্ডিত দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী তাঁর ‘চার্বাক দর্শন’ গ্রন্থের শেষে ‘বার্হস্পত্যসূত্রম্’ শিরোনামে একটি পরিশিষ্ট সংযোজন করেছেন। বিভিন্ন গ্রন্থে চার্বাকমত বর্ণনায় চার্বাকদের নিজস্ব উক্তি হিসেবে যে-সব উদ্ধৃতি পাওয়া যায় তারই সংকলন এটি। তাঁর তালিকায় মোট ৫৪ টি ‘সূত্র’ বর্তমান। শাস্ত্রী মহাশয়ের ভাষায়- ‘…বৃহস্পতি, চার্বাক, লোকায়ত, পুরন্দর, কম্বলাশ্বতর- এই কয়জন দার্শনিকের অর্ধশতাধিক সূত্র এবং যে গ্রন্থ হইতে যেরূপ অবস্থায় সংগৃহীত হইয়াছে তা প্রদত্ত হইল।
 .
দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী মহাশয় কর্তৃক এভাবে বিভিন্নজনের সূত্রগুলিকে ‘বার্হস্পত্যসূত্রম’ নামে পরিশিষ্টে অন্তর্ভুক্তির কারণ তাঁর ধারণা- বৃহস্পতি ব্যক্তিবিশেষের নাম নয় ; ব্যাস, শঙ্করাচার্য ইত্যাদি উপাধির মত বৃহস্পতিকেও উপাধিবিশেষ বলা চলে। চার্বাক মতের প্রচারে যাঁরা সহায়তা করেছেন এই উপাধি তাঁরাই লাভ করেছেন। এবং তাঁর মতে- ‘সুদূর অতীতে কোনও সময়ে এই বৃহস্পতিগণ মিলিত হইয়া বার্হস্পত্য মত প্রবর্তন… …করেন।’ কিন্তু শাস্ত্রী মহাশয়ের এই ধারণা বা সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে যথোপযুক্ত প্রমাণের অভাব থাকায় তা সমর্থনযোগ্য নয় বলেই গবেষকরা মনে করেন।
 .
এছাড়া তাঁর প্রদত্ত তালিকায় চার্বাকদের নামে প্রচলিত নানান প্রামাণিক লোকগাথাও অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই কোন কোন গবেষকদের মধ্য থেকে এরকম প্রশ্নও উত্থিত হয়েছে যে- পারিভাষিক অর্থে লোকগাথাকেও ‘সূত্র’ আখ্যা দেয়া সঙ্গত কিনা। তবে চার্বাকালোচনা করতে হলে কোনভাবেই তাঁর পরিশিষ্টটিকে উপেক্ষা করার উপায় নেই বলেই মনে হয়।
 .
অন্যদিকে বিখ্যাত ইতিহাস গবেষক এফ. ডব্লু. টমাস (F. W. Thomas) ‘বৃহস্পতি-সূত্র’ নামে একটি পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেন বলে জানা যায় এবং ১৯২১ সালে অনুবাদসহ তার মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। কিন্তু গ্রন্থটি প্রকৃত চার্বাক মতের পরিচায়ক হতে পারে না বলে পণ্ডিতদের অভিমত। কেননা আরেক প্রখ্যাত গবেষক ‘তুচ্চি (Twcci) গ্রন্থটির ওপর মন্তব্য করেছেন যে, এই বই ব্রাহ্মণ্য-প্রভাবে ভরপুর। গ্রন্থটি থেকে হয়তো বড়জোর চার্বাক-সংক্রান্ত সামান্য খণ্ড ও বিক্ষিপ্ত আভাস পাওয়া যেতে পারে, তার বেশি কিছু নয়। চন্দ্রকীর্তির ‘প্রজ্ঞাশাস্ত্র’ এবং আর্যদেবের ‘শাস্ত্রাশাস্ত্র’ গ্রন্থে প্রকৃত বার্হস্পত্য-সূত্র উদ্ধৃত হয়েছে বলে তুচ্চি উল্লেখ করেন। তাই বিভিন্ন দার্শনিকের চার্বাক-বর্ণনায় উদ্ধৃত বৃহস্পতি-সূত্রগুলি বা চার্বাকদের নিজস্ব উক্তি হিসেবে বাক্যগুলির প্রকৃত উৎস জানবার সুযোগ না থাকলেও উদ্ধৃতিগুলি উড়িয়ে দেবার মতো নয়। অনেকসময় চার্বাকমত পুনর্গঠনে এগুলি বিশেষ মূল্যবান উপাদান হতে পারে।’ (সূত্র: ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে / দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়)।
 .
তবে যেভাবেই বিবেচনা করা হোক না কেন, চার্বাকমতের সেসকল সূত্র কালের গহ্বরে হারিয়ে গেলেও ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যের বিভিন্ন প্রামাণিক গ্রন্থের অনুশীলনে পুনঃসঙ্ঘটিত এসব সূত্র পরবর্তীকালে বার্হস্পত্য-সূত্র নামে সংকলিত হয়েছে। শ্রীমৎ-সায়ণমাধব-কৃত ‘সর্বদর্শনসংগ্রহ’ গ্রন্থ অবলম্বনে শ্রীপঞ্চানন শাস্ত্রী রচিত ‘চার্বাক-দর্শনম্’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে সংস্কৃতভাষায় এরকম একশটি বার্হস্পত্য-সূত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপিত এই সংকলিত বার্হস্পত্য-সূত্রগুলি সম্যক অনুধাবনের লক্ষ্যে সম্ভাব্য তর্জমাসহ নিচে উপস্থাপন করা হলো। 
.
ইতোপূর্বেও সূত্রের লক্ষণে বলা হয়েছে, অল্প অক্ষরযুক্ত, সন্দেহমুক্ত, সারযুক্ত, সর্বত্র প্রয়োগযোগ্য এবং নির্দোষ নিয়মকেই সূত্র বলে। সূত্র হলো সংক্ষিপ্ত বাক্যের নম্র উপচার। ছোট ছোট অর্থপূর্ণ বচনের সাহায্যে এরকম কিছু সূত্রের আবরণে প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাকে সযত্নে গেঁথে রাখা হতো। স্বল্পতম অক্ষরবিশিষ্ট এরকম কিছু সংখ্যক সূত্রের মাধ্যমে দর্শন-চিন্তার প্রথম আত্মপ্রকাশই ভারতীয় দর্শনের প্রচলিত ধারা এবং ভারতীয় দর্শনের অধিকাংশ শাখারই আদি রচনা এই জাতীয় কিছু সূত্রের সমষ্টি বলে মনে করা হয়। সূত্রগুলোয় অক্ষরসংখ্যা নিয়মনের দিকে খুব জোর দেয়া হয়েছে, ফলে সংক্ষিপ্ততম অবয়বে ব্যাপকতম অর্থব্যঞ্জনার প্রবণতা প্রত্যেক সূত্রে দেখা যায়। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় তার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। কেননা সূত্রগুলির মর্মার্থের পেছনে যে ব্যাপক তথ্য ও যুক্তির শাস্ত্রীয় আধার সুপ্ত থাকে সেগুলির বিশ্লেষণ ছাড়া বস্তুত সূত্রগুলির ব্যাখ্যা সমার্থক হয় না। তারপরও ব্যাখ্যাকারের নিজস্ব চিন্তা ও মতের সাপেক্ষে ব্যাখ্যাগুলির বক্তব্য-চেহারাও পরিবর্তিত হয়ে যায়। আর তাই যে-কোন তর্জমার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের একান্ত আক্ষরিক তর্জমা বলতে গেলে অসম্ভবই প্রায়। সেই সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেই বার্হস্পত্য-সূত্রের তর্জমাগুলি স্ব-স্ব সূত্রের সাথে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে।
 …
বৃহস্পতি-প্রণীতম্ বার্হস্পত্য-সূত্রম্
লোকায়ত-মতে তত্ত্বানি দর্শয়তি-
(লোকায়ত-মতে তত্ত্বাদির বিচার)
 .
১) পৃথিব্যপতেজো বায়ুরিতি তত্ত্বানি।
[ পৃথিবী, জল, অগ্নি ও বায়ু- এই চারটিই তত্ত্ব। ]

২) তৎ-সমুদায়ে শরীরেন্দ্রিয়-বিষয়-সংজ্ঞা।
[ এর (পদার্থ বা তত্ত্ব চতুষ্টয়) সমন্বয়ে শরীর, ইন্দ্রিয়, চৈতন্য ইত্যাদি সৃষ্ট। ]

৩) তেভ্যশ্চৈতন্যম্ ।
[ (দেহের আকারে পরিণত ভূত-চতুষ্টয় হতে) চৈতন্যের জন্ম ও অভিব্যক্তি হয়। ]

৪) কিণ্বাদিভ্যো মদশক্তিবৎ।
[ কিণ্ব বা বৃক্ষবিশেষ হতে যেরূপ মদশক্তি জন্মে। ]

৫) শরীরেন্দ্রিয়-সঙ্ঘাত এব চেতনঃ ক্ষেত্রজ্ঞঃ।
[ শরীর ও ইন্দ্রিয়ের সংঘাতের মাধ্যমে দেহে চেতনার জন্ম হয়।]
 .
সুকৃত-দুষ্কৃত-কর্মণাং ফলাভাবং দর্শয়তি-
(ধর্মশাস্ত্রের সুকৃত-দুষ্কৃত কর্মের ফলের অভাব বিচার)
 .
৬) ন ধর্ম্মাংশ্চরেৎ।
[(প্রত্যক্ষের অগোচরে অতীন্দ্রিয় সত্তা নেই বলে) ধর্ম কর্ম অনুষ্ঠেয় নহে।]

৭) এষ্যৎ ফলত্বাৎ।
[এ-রকম অদৃষ্ট ব্যাখ্যাত ফল ইহজন্মে পাওয়া যায় না।]

৮) সাংশয়িকত্বাচ্চ।
[(ধর্মশাস্ত্র-বর্ণিত যজ্ঞাদি বা পারলৌকিক বিষয়াদি সাধিত হলেও ফল হবে কিনা) সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।]

৯) কো হ্যবালিশো হস্তগতং পরগতং কুর্য্যাৎ।
[মূর্খ ভিন্ন কোন্ ব্যক্তি হস্তগত দ্রব্যকে পরগত করে?]

১০)  বরমদ্য কপোতঃ শ্বো ময়ূরাৎ।
[আগামীকাল ময়ূর লাভের আশার অপেক্ষা আজকের প্রাপ্ত কপোত মন্দের মধ্যে ভালো।]

১১)  বরং সাংশয়িকান্ নিষ্কাদসাংশয়িকঃ কার্যাপণঃ।
[সংশয়সঙ্কুল শত স্বর্ণমুদ্রা লাভ অপেক্ষা নিঃসন্দেহ এক কার্যাপণ লাভও মন্দের ভালো।]

১২)  ন ভস্মধারণম্ ।
[ (প্রতিক্ষণে শরীরের অনিত্যতাকে উপলব্ধির জন্য) শরীরে চিতা-ভস্মধারণ করা অর্থহীন কাজ। ]

১৩)  নাগ্নিহোত্র-বেদপাঠাদীনি চ।
[(পারলৌকিক ফলপ্রাপ্তির আশায়) যাগ-যজ্ঞ অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠেয় নহে, বেদ পাঠও নিষ্ফল। ]

১৪)  ন তীর্থযাত্রা।
[(অর্থহীন অপচয় করে কাল্পনিক ফললাভের আশায়) তীর্থযাত্রা করণীয় নয়। ]

১৫)  সর্বমর্থার্থং করোত্যগ্নিহোত্র-সন্ধ্যা-জপাদীন্ ।
[অগ্নিহোত্র-সন্ধ্যা-জপ ইত্যাদি অনুষ্ঠান করা সর্ব অর্থেই অর্থহীন অপ্রয়োজনীয়।]

১৬)  স্বদোষং গূহিতুং কামার্ত্তো বেদং পঠতি।
[বস্তুত স্বীয় দোষ ঢাকবার অভিপ্রায়ে বেদ-পাঠের কথা বলা হয়।]

১৭)  অগ্নিহোত্রাদীন্ করোতি।
[(পারলৌকিক স্বর্গপ্রাপ্তির কামনায়) অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করা নির্বুদ্ধিতা।]

১৮) সুরাপানার্থং মহিলামেহনার্থং করোতি।
[সুরাপান রমণী-সম্ভোগ সুখার্থেই করণীয়।]

১৯) বিষ্ণ্বাদয়ঃ সুরাপায়িনঃ।
[সুরাপান উপভোগ-স্পৃহার জন্ম দেয়।]

২০) শিবাদয়ঃ। [নিজের কামনা পূরণার্থে রমণীয় সুখ উপভোগ্য।]
 .
 শৃঙ্গারবেশাদীনাং কর্ত্তব্যত্বং দর্শয়তি-
 (শৃঙ্গারবেশ ইত্যাদির কর্তব্য বিচার)
 .
২১) শৃঙ্গারবেশং কুর্য্যাৎ।
[ (নিজেকে উপভোগ্য করতে) শৃঙ্গার বেশ করণীয়। ]

২২) অক্ষৈর্দীব্যাৎ।
[পণ-পূর্বক অক্ষ বা দ্যুতক্রীড়া ক্ষতির কারণ হয়।]

২৩) নৈব দীব্যাচ্চ।
[তাই কখনো এতে আসক্ত হওয়া উচিৎ নয়।]

২৪) আসবানি সেবয়েৎ।
[ আসব পান করণীয়। ]

২৫) মাংসানি চ।
[(ভোগ-সামর্থ্যের প্রয়োজনে) মাংস ভোজন দোষণীয় নয়। ]

২৬) মত্তকাশিন্যঃ সেব্যাঃ।
[সামর্থ অনুযায়ী সুখ উপভোগ করা উচিৎ।]

২৭) দিব্য-প্রমদা-দর্শনঞ্চ।
[(মনোমুগ্ধতার জন্য) দিব্য প্রমদার দর্শন উচিৎ। ]

২৮) নেত্রাজনঞ্চ।
[(সৌকর্য্যের প্রয়োজনে) নেত্রাঞ্জন গ্রহন করা উচিৎ। ]

২৯) আদর্শ-দর্শনঞ্চ।
[(নিজেকে আকর্ষণীয় করার প্রয়োজনে) দর্পণে মুখাদির দর্শন করণীয়।]

৩০) তম্বুল-চর্বণঞ্চ।
[(সুখকর তৃপ্তির জন্য) তাম্বুল চর্বণ করা যেতে পারে।]

৩১) কর্পূর-চন্দনাগুরুধূপঞ্চ।
[ কর্পূর চন্দন ও অগুরু অনুলেপন করণীয়। ]
 .
 বেদাপ্রামাণ্যং দর্শয়তি-
(বেদের অপ্রামাণ্য বিচার)
 .
৩২) যাগশ্রূতিরপ্রমাণং প্রত্যক্ষবিরুদ্ধত্বাৎ গ্রাবোন্মজ্জন-শ্রূতিবৎ।
[পাথর ভাসতে থাকার মতোই যজ্ঞের ফল বিষয়ে বেদের সত্যতা প্রত্যক্ষবিরুদ্ধ অসম্ভব।]

৩৩) অনিত্য-দর্শনাচ্চ।
[বেদানুগ ভাবনা শূন্যগর্ভ।]

৩৪) শাস্ত্রদৃষ্ট-বিরোধাচ্চ।
[কেননা শাস্ত্রে প্রচুর বিরোধ দৃষ্ট হয়।]

৩৫) তথা ফলাভাবাৎ।
[(শাস্ত্রে যেসব পারলৌকিক ফলপ্রাপ্তির কথা আছে) সে-সব নিষ্ফল।]

৩৬) অন্যানর্থক্যাৎ।
[শাস্ত্র-কথিত অনর্থক বাক্যের অর্থ করতে যাওয়া নির্বুদ্ধিতা।]

৩৭) অভাগি-প্রতিষেধাচ্চ।
[বেদের পরস্পরবিরোধী বাক্যই একটি আরেকটিকে মিথ্যা প্রমাণ করে।]

৩৮) অনিত্য-সংযোগাৎ।
[বেদবাক্যের একটির সাথে অন্যটির সাযুজ্য নেই।]

৩৯) স্ত্র্যপরাধাৎ কর্ত্তুশ্চ পুত্রদর্শনাৎ।
[(বেদোক্ত শূদ্র ইত্যাদি অশূচি বর্ণের দোষ) স্ত্রীলোকের অপরাধ হিসেবে পুত্রে সঞ্চারিত হতে দেখা যায়।]

৪০) বিধিশ্চানর্থকঃ ক্বচিৎ তস্মাৎ স্তুতিঃ প্রতীয়েত
তৎসামান্যাদিতরেষু তথাত্বম্ ।
[বেদে বিধিবাক্যের নামে যেসব স্তুতি রয়েছে তাতে চিরায়ত সামান্যের-কল্পনা নিরর্থক।]

৪১) তদর্থ-শাস্ত্রাৎ।
[শাস্ত্র ব্যতীত ধর্মে কোনো প্রমাণ নেই- এই অর্থে বেদ অপ্রামাণ্য।]

৪২) বাক্য-নিয়মাৎ।
[শাস্ত্র-বাক্য লৌকিক নিয়ম বহির্ভূত।]

৪৩) বুদ্ধশাস্ত্রাৎ।
[বেদ মনুষ্য-রচিত, তাই তা নিত্য সত্য হতে পারে না।]

৪৪) অবিদ্যমান-বচনাৎ।
[বেদের অবিদ্যমান বচন থেকে যে জ্ঞান হয় তার কোনো বাস্তব রূপায়ন নেই।]

৪৫) অচেতনেহর্থবন্ধনাৎ।
[ফলপ্রাপ্তির কামনায় বেদে অচেতন পদার্থের স্তুতি রয়েছে বলে বেদের অযথার্থতা প্রতীত হয়।]

৪৬) অর্থ-বিপ্রতিষেধাৎ।
[বেদবাক্যে পরস্পর অর্থ-বিরোধ দৃষ্ট হয়, যা একটি আরেকটিকে খণ্ডন করে।]

৪৭) স্বাধ্যায়বদবচনাৎ।
[স্বাধ্যায়রূপ প্রণব-ধ্বনি কোন বচন বা বাক্য হতে পারে না, এবং স্বাধ্যায়ের মাধ্যমে অতীন্দ্রিয় ইষ্টদেবতার সন্দর্শন ঘটে এমন ধারণা বিশ্বাসযোগ্য নয়।]

৪৮) অবিজ্ঞেয়াৎ।
[বেদোক্ত প্রত্যক্ষ উপলব্ধিহীন অর্থবিচার গ্রহণীয় নয়।]

৪৯) অনিত্যসংযোগাদ্ মন্ত্রানর্থক্যম্ ।
[শাস্ত্রে এক মন্ত্রের সাথে অন্য মন্ত্রের অর্থগত সাযুজ্যহীনতা রয়েছে।]

৫০) হেতুদর্শনাচ্চ।
[ধর্মের পারলৌকিক কল্পনার সাথে ব্যাপ্তি-স্মরণ সম্ভব নয় বলে তা অপ্রামাণ্য।]

৫১) অস্থানাৎ।
[দেশান্তরে বা কালান্তরে সাধ্যের সাথে হেতুর ব্যাপ্তি সর্বকালীন নয়।]

৫২) করোতি-শব্দাৎ।
[(কোনো ইন্দ্রিয়াতীত সর্বজ্ঞ সত্তা হও বললেই হয়ে যায়) এমন কৃত-বাক্য গ্রহণীয় নয়।]

৫৩) সত্ত্বান্তরে চ যৌগপদ্যাৎ।
[(শ্রুতিবাক্য সর্বত্র অবিকৃত অভিন্ন হওয়ার কথা হলেও) স্থানবিশেষে ভিন্নরূপে প্রদর্শিত হয়।]

৫৪) বৃদ্ধিশ্চ কর্ত্তৃভূম্নাস্য।

৫৫) প্রকৃতি-বিকৃত্যোশ্চ।
[জগতের ব্যাখ্যায় শাস্ত্রোক্ত প্রকৃতি-বিকৃতি ইত্যাদি সমর্থনযোগ্য নয়।]

৫৬) ন নিত্যত্বং বেদানাং কার্য্যত্ব-শ্রূতেঃ।
[শ্রুতি বা বেদবাক্য থেকে কোনো কার্যকর নিত্যজ্ঞান সম্ভব নয়।]

৫৭) ন শব্দ-নিত্যত্বং কার্য্যতা-প্রতীতেঃ।
[আপ্তবাক্যে শব্দ-নিত্যতা প্রমাণিত নয়।]

৫৮) তদপ্রামাণ্যমনৃত-ব্যাঘাত-পুনরুক্ত-দোষেভ্যঃ।
[ এতে (বেদে) অনৃত দোষ বা মিথ্যে কথা, ব্যাঘাত দোষ বা পরস্পর বিরুদ্ধ কথা এবং পুনরুক্ত দোষ পূর্ণ। ]

৫৯) ধূর্ত্ত-প্রলাপস্ত্রয়ী।
[ (বেদের কর্তা) ভণ্ড, ধূর্ত, নিশাচর ত্রয়ী। ]

৬০) বৃথা ধর্মং বদত্যর্থসাধনং লোকায়তিকঃ পিণ্ডাদয়শ্চোর ইতি চ।
[লোকায়তিকরা বলেন, ধর্মশাস্ত্রে পিণ্ডদান প্রেত্যকর্ম ইত্যাদির সমর্থনে অযথা অতিকথন ভণ্ডদের উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত মাত্র।]

৬১) সোহপ্যশনার্থং ধর্মং বদতি।
[ আস্তিকগণ অশন বা জীবিকার জন্য ধর্ম প্রচার করেন। ]

৬২) পরাপবাদার্থং বেদশাস্ত্রং ধর্মাদীন্ পঠতি।
[ধর্মের নামে বেদশাস্ত্রে হিংসাত্মক বাক্য পাঠ করানো হয়।]

৬৩) সর্বান্ নিন্দতি।
[(বেদ) নিন্দাবাক্যে ভরপুর।]

৬৪) মহেশ্বর-বিষ্ণ্বাদীনপি।
[(ধর্মশাস্ত্রোক্ত) মহেশ্বর জাগতিক কামনা পূরণে অসমর্থ।]
 .
 পুরুষার্থং দর্শয়তি-
 (পুরুষার্থ বিচার)
 .
৬৫) কাম এবৈকঃ পুরুষার্থঃ।
[(যা কামনা করা হয় তাই কাম এবং) একমাত্র কামই পুরুষার্থ। ]

৬৬) উভয়ী প্রকৃতিঃ কামে সজ্জেৎ।
[ধর্ম ও মোক্ষ কোন প্রয়োজনই সিদ্ধ করতে পারে না বলে কামনা পূরণের জন্য শরীরই মুখ্য।]

৬৭) কাম এব প্রণিনাং কারণম্ ।
[পুরুষার্থ রূপে কামে আসক্ত হওয়াই যুক্তিযুক্ত।]

৬৮) শরীরস্থিতি-হেতুত্বাদাহার-সধর্ম্মাণো হি কামাঃ।
[ শরীরের স্থিতিহেতু বলে কামগুলি আহারের সধর্মা- আহারের সমানগুণযুক্ত। ]

৬৯) ন হি ভিক্ষুকাঃ সন্তীতি স্থাল্যো নাধিশ্রীয়ন্তে।
ন হি ভিক্ষুকাঃ সন্তীতি যবা নোপ্যন্তে।
[দ্বারে ভিক্ষুক এসে দাঁড়াতে পারে বলে উনুনে হাঁড়ি চড়াবে না, এরকম করে না কেউ।
কিংবা ভিক্ষুক আছে বলে যব বপন করবে না, এটাও সুবুদ্ধির পরিচয় নয়।]
 .
 প্রমাণং দর্শয়তি-
 (প্রমাণ বিচার)
.
৭০) প্রত্যক্ষমেব প্রমাণম্ ।
[ কেবল প্রত্যক্ষই প্রমাণ। ]

৭১) নানুমানং প্রমাণম্ ।
[ অনুমান প্রভৃতি প্রমাণ নয়। ]

৭২) অত্যন্ত-প্রায়ৈকদেশ-সাধর্ম্ম্যাদুপমানাসিদ্ধিঃ।
[সাদৃশ্যজ্ঞান অনুমাননির্ভর। পূর্বশ্রুত সাদৃশ্য-জ্ঞানের দ্বারা অজ্ঞাতপূর্ব পদার্থকে প্রত্যক্ষ করে যে উপমিতি জ্ঞান হয় তাকে বলে উপমান। প্রমাণ হিসেবে উপমান অসিদ্ধ।]

৭৩) শব্দোহনুমানমর্থস্যানুপলব্ধেরনুমেয়ত্বাৎ।
[শব্দ বা আপ্তবাক্য অনুমাননির্ভর বলে তা অজ্ঞাত অনুপলব্ধ বিষয়ের জ্ঞান হতে পারে না।]

৭৪) অপ্রমানং শব্দঃ।
[ শব্দ বা আপ্তবাক্য প্রমাণ নয়। ]
 .
 ঈশ্বরাভাবং দর্শয়তি-
 (ঈশ্বরের অনস্তিত্ব বিচার)
 .
৭৫) ঈশ্বরাসিদ্ধেঃ।
[ ঈশ্বর অসিদ্ধ বা তার কোন অস্তিত্ব নেই। ]

৭৬) প্রমাণাভাবান্ন তৎসিদ্ধিঃ।
[ প্রমাণের অভাবেই তার (ঈশ্বর) অস্তিত্ব সিদ্ধ হয় না। ]

৭৭) ঈনেশ্বরাধিষ্ঠিতে ফলসম্পত্তিঃ কর্মণা তৎ-সিদ্ধেঃ।
[যদি ঈশ্বরে প্রমাণ থাকতো তবে ঈশ্বরে সিদ্ধি হতো, কিন্তু ঈশ্বরে প্রমাণ নেই বলে স্বোপার্জিত কর্মই অনুগুণ ফল প্রদান করে।]

৭৮) শোণিত-শুক্রসম্ভবঃ পুরুষো মাতাপিতৃ-নিমিত্তকঃ।
[শুক্র-শোণিত সম্ভূত এই মানুষের সৃষ্টি পিতা-মাতার মিলনহেতুই সম্ভব।]

৭৯) নাস্তি সর্বজ্ঞঃ প্রত্যক্ষাদি-গোচরাতিক্রান্তত্বাৎ।
[প্রত্যক্ষের অগোচরে সর্বজ্ঞ সর্বাধিকারী কিছুর অস্তিত্ব নেই।]

৮০) শশশৃঙ্গবৎ।
[শশক বা খরগোশের শিং-এর মতোই (অতীন্দ্রিয় বস্তু অবাস্তব)।

৮১) মুক্তবদ্ধয়োরন্যতরাভাবান্ন তৎ-সিদ্ধিঃ।
[(অতীন্দ্রিয় কিছু নেই বলে) মুক্ত বা বদ্ধ আত্মা বলে কোনো সত্তা সিদ্ধ নয়।]

৮২) স্বোপকারাদধিষ্ঠানং লোকবৎ।
[লোকের প্রয়োজনে অধিষ্ঠিত (রাজাই) ক্ষমতা শীর্ষে থাকার সুবাদে দুর্জনকে শাস্তি প্রদান করেন, সুজনকে উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করেন।]

৮৩) লৌকিকেশ্বরবদিতরথা।
[ভুবন প্রসিদ্ধ অতিক্ষমতার অধিকারী (রাজাই) লৌকিক ঈশ্বর।]

৮৪) আত্মবান্ রাজা।
[(যিনি পালক, রক্ষক, পরিচালক রূপে প্রজার অন্তরে আসন লাভ করেন) এই অমিত ক্ষমতার অধিকারীই রাজা।]

৮৫) লোকসিদ্ধো রাজা পরমেশ্বরঃ।
[(কার্যসিদ্ধির প্রয়োজনে দেশ, কাল, পাত্র অনুযায়ী বিবিধ রূপ ধারণে সক্ষম) লোকপ্রসিদ্ধ রাজাই পরমেশ্বর। ]
 .
পরলোকাভাবং দর্শয়তি-
(পরলোকের অনস্তিত্ব বিচার)
 .
৮৬) নাস্তি পরলোকঃ।
[ পরলোক বলে কিছু নেই। ]

৮৭) কো হি তদ্ বেদ যদমুস্মিন্ লোকে অস্তি বা নাস্তি বা।
[অদৃষ্ট বলে যদি কিছু থাকতো, তবে তা কোন না কোনভাবে দৃষ্ট হতো, দৃষ্ট না হয়ে অদৃষ্ট হতো না।]

৮৮) দৃষ্ট-বিরোধাচ্চ।
[ অতএব অদৃষ্ট নাই। ]

৮৯) পরলোকিনোহভাবাৎ পরলোকাভাবঃ।
[ যেহেতু পরলোক নাই, তাই পরলোকগামী আত্মা বা পরলোকীও নাই। ]

৯০) জাতিস্মরণমসিদ্ধম্, এক-গ্রাম-গতানং সর্বেষাং স্মরণাৎ।
[জাতিস্মরণ বা পূর্বজন্মের স্মৃতি অসিদ্ধ বা অসম্ভব। মৃতের কোন স্মৃতি ধারণ অসম্ভব।]
.
আত্মস্বরূপং দর্শয়তি-
(আত্মস্বরূপের বিচার)
.
৯১) শরীরমাত্মা।
[ শরীরই আত্মা। ]

৯২) চৈতন্য-বিশিষ্টঃ কায়ঃ পুরুষঃ।
[ চৈতন্যবিশিষ্ট কায়া বা দেহই পুরুষ বা আত্মা। ]

৯৩) মম শরীরমিতি ব্যবহারো রাহোঃ শির ইত্যাদিবদৌপচারিকঃ।
[(পৌরাণিকী অনুসারে রাহু বলতে যেহেতু মস্তক-সর্বস্ব শরীরই বোঝায়) ’আমার দেহ’ বললেও তা ’রাহুর মস্তক’ এর মতো অভেদ উপাচার বিশেষ, অর্থাৎ কথার কথা। ]

৯৪) এতাবানেব পুরুষো যাবানিন্দ্রিয়গোচরঃ।
[ যে পুরুষ ইন্দ্রিয়ের গোচর, সেই পুরুষই আছে, অন্য পুরুষ নাই। ]

৯৫) ইহলোক-পরলোক-শরীরয়োর্ভিন্নত্বাৎ
তদগতয়োরপি চিত্তয়োর্নৈকঃ সন্তানঃ।
[শরীর ভিন্ন ইহলোক পরলোক বলে কিছু নেই, শরীরের নাশ হলে চৈতন্যেরও অবলুপ্তি হয়।]
 .
মোক্ষং দর্শয়তি-
(মোক্ষ বিচার)
 .
৯৬) দেহোচ্ছেদো মোক্ষঃ।
[ দেহের উচ্ছেদই মোক্ষ। ]

৯৭) সেবকা ন মুক্তাঃ পরতন্ত্রত্বাদ্ বদ্ধজীববৎ।
[শরীর ভিন্ন মুক্ত বা বদ্ধ আত্মা বলে কিছু নেই।]

৯৮) তর্কাপ্রতিষ্ঠানাৎ।
[(যুক্তি প্রতিষ্ঠিত বলে) তর্ক অপ্রতিষ্ঠ নয়।]

৯৯) সর্বথা লোকায়তিকমেব শাস্ত্রম্ ।
[ সর্বদা লোকায়তিকই একমাত্র শাস্ত্র। ]

১০০) ইত্যাহাচার্য্যো বৃহস্পতিঃ।
[আচার্য বৃহস্পতি কর্তৃক বর্ণনা সমাপ্ত হলো।]
.
[সবগুলো বার্হস্পত্য-সূত্রের তর্জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে সংগৃহীত হলে যথাস্থানে তা সংযুক্ত করে দেয়া হবে।]
.
এখানে উল্লেখ্য, জয়রাশি ভট্টের ‘তত্ত্বোপপ্লবসিংহ’ ও জয়ন্ত ভট্টের ‘ন্যায়মঞ্জরী’ গ্রন্থে উল্লেখকৃত বার্হস্পত্য সূত্রের প্রথম বা আদি সূত্র ছিলো- ‘অথাতো তত্ত্বং ব্যাখ্যা স্যামঃ।’ কিন্তু দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী ও পাটনা প্রকাশিত বার্হস্পত্য-সূত্রের সংকলনে এই সূত্রটি অনুপস্থিত বলে জানা যায়। সঙ্গত কারণেই উপরে শ্রীপঞ্চানন শাস্ত্রীর উপস্থাপিত বার্হস্পত্য-সূত্রেও এটি নেই। এজন্যেই ‘মনে হয়, প্রতিজ্ঞাভঙ্গ বিবেচনায় পরবর্ত্তীকালে ইহা পরিত্যক্ত হইয়াছে’ বলে শাস্ত্রী মহাশয় মন্তব্য-টীকায় তা উল্লেখ করেছেন।
নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال