ভূমিকা | বৌদ্ধ দর্শন

 ভূমিকা
ভারতীয় দর্শনের যে সকল সম্প্রদায় বেদভিত্তিক উপনিষদীয় চিন্তাধারার বিরোধিতা করেছেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাঁদের মধ্যে সব থেকে প্রভাবশালী বললে অত্যুক্তি হয় না। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যখন উপনিষদীয় চিন্তাধারা কর্মমীমাংসা ও ব্রহ্মমীমাংসার বিরোধে ধর্মসংকটের ন্যায় তত্ত্বসংকটের সম্মুখীন হয় তখন শাক্যবংশীয় রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের কঠোর তপস্যালব্ধ সত্যের অনুসারী এক বেদবিরোধী সম্পদায় দর্শনের আঙিনায় আবির্ভূত হন। এই সম্প্রদায়ই ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত। বুদ্ধ উপনিষদীয় কর্মকাণ্ড ও ব্রহ্মকাণ্ডের চুলচেরা যুক্তিতর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে এবং জড়বাদ ও নাস্তিকতার দার্শনিক সমস্যায় মগ্ন না থেকে সাধারণ মানুষের বোধগম্য এক আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার প্রবর্তন করেন। এই আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা বেদভিত্তিক না হয়েও সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা নিবৃত্তির সহায়ক হয়েছিলো। ধীরে ধীরে এই চিন্তাধারার প্রভাব এতো বিস্তার লাভ করেছিলো যে ভারতের সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি ধর্মজীবনকেও তা আলোড়িত করেছিলো। নিরীশ্বরবাদী হওয়া সত্ত্বেও উচ্চমানের আধ্যাত্মিকতার প্রচার বৌদ্ধ চিন্তাধারার প্রতি সাধারণ মানুষকে অতিমাত্রায় আকৃষ্ট করে। এই বৌদ্ধপ্রভাবকে প্রতিহত করার জন্যই পরবর্তীকালে উপনিষদভিত্তিক বেদান্তের নতুন করে ভাষ্য রচনার প্রয়োজন দেখা দেয়। জনমানসে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করেছিলো বলেই বেদানুসারী হিন্দু দর্শনে এই মতবাদ খণ্ডনের জন্য বিশেষ যত্ন লক্ষ্য করা যায়।
.
সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের (৫৬৩-৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব) প্রচারিত মতবাদ থেকেই বৌদ্ধ দর্শন নামের সূত্রপাত। তবে বুদ্ধের আবির্ভাবের পূর্বে অন্তত দুই শতাব্দি ধরে ভারতীয় দার্শনিক চিন্তাজগতে যে উৎকর্ষ হয়েছিলো তা-ই বৌদ্ধমতের পথ প্রস্তুত করেছিলো। উত্তর বৈদিক যুগের অর্থাৎ উপনিষৎ যুগের অন্তিমভাগে দর্শনচিন্তার উন্মেষ থেকে বুদ্ধের জন্মের পূর্বের ৯০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কালকেই বৌদ্ধমতের পশ্চাদ্ভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবং সাথে সাথে এখানে বলে রাখা ভালো যে, ভারতীয় দর্শনে বৌদ্ধমত যে সমৃদ্ধ ধারার সূচনা করে, তাকে কেন্দ্র করে ভারতে নাগার্জুন, অসঙ্গ, বসুবন্ধু, দিঙনাগ, ধর্মকীর্তি প্রমুখ অতুলনীয় দার্শনিকগণের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে ভারতীয় দর্শনের উৎকর্ষ অর্জনের পাশাপাশি পরবর্তীকালের প্রায় সমস্ত ভারতীয় দর্শনই তাঁদের দ্বারা ভালোভাবেই প্রভাবিত হয়েছে।
 .
বৌদ্ধমতের পশ্চাদ্ভূমি
বুদ্ধের জন্মের সময়টাতে তৎকালীন ভারতবর্ষে তখন বহু মতবাদের প্রচলন ছিলো। পরলোক আছে বা নেই, মৃত্যুর পর জীবের অস্তিত্ব থাকে কি-না, কর্ম ও কর্মবিপাক বা কর্মফল আছে কি-না, ইত্যাদি অনেক প্রশ্নে তখন ভাবনাজগত তীব্র কৌতুহলী হয়ে ওঠার পাশাপাশি বেদকে শব্দপ্রমাণ বলে স্বীকার করে বৈদিক মতেরই প্রাধান্য তখন। ফলে ব্রাহ্মণ ও শ্রমণ এই প্রসিদ্ধ প্রাচীন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচারচর্চার পাশাপাশি বিরোধও স্পষ্ট ও তীব্র হয়ে ওঠেছে।
 .
শ্রমণরা ছিলেন অবৈদিক। নিজ নিজ বিশ্বাস ও বিচারধারা অনুযায়ী আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ অর্জনের লক্ষ্যে সন্ন্যাস জীবনে তপস্যার মাধ্যমেই মোক্ষ সাধনে রত থাকতেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে আস্তিক ও নাস্তিক উভয় ধারাই ছিলো। তখনো ঈশ্বর আছে বা নেই এই ব্যুৎপত্তি দিয়ে আস্তিক্য ও নাস্তিক্য নির্ধারণ হতো না। তা নির্ধারণ হতো পরলোকে কর্মফল আছে বা নেই এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসকে ভিত্তি করে। পরবর্তীকালের পাণিনির নির্বচন অনুসারে পরলোকে কর্মফল আছে এরূপ বুদ্ধি যার তিনি হচ্ছেন আস্তিক এবং পরলোকে কর্মফল নেই এরূপ বুদ্ধি যার তাদেরকে বলা হতো নাস্তিক। সে কারণে আস্তিক শ্রমণরাও জগতের কোন স্রষ্টা বা কর্তাকে স্বীকার করতেন না। তারা সংসারী না হয়ে ব্রহ্মচর্য পালন করতেন। তারা যাগযজ্ঞাদি বৈদিক কর্মে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না, এমনকি বেদের প্রামাণ্যও স্বীকার করতেন না।
 .
অন্যদিকে ব্রাহ্মণেরা বৈদিক ধর্ম অনুসারে মন্ত্র, জপ, দান, হোম, মঙ্গল, প্রায়শ্চিত্ত প্রভৃতি অনুষ্ঠানের বিধান করতো। তারা দুষ্কৃত ও সুকৃত ফলবিপাক বা কর্মফলে বিশ্বাসী ছিলো এবং বেদবিহিত অনুষ্ঠানকে বিধিসম্মত বলে প্রাধান্য দিয়েছিলো। সঙ্কীর্ণমনা স্বার্থান্বেষী পুরোহিতেরা বর্ণাশ্রম প্রথা প্রচলনের মাধ্যমে নিজেদেরকে মানুষরূপী দেবতা হিসেবে ঘোষণা করেছিলো। তবে উপনিষদ যুগের (৭০০-৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) শেষভাগে এসে বেদের কর্মকাণ্ডে প্রাধান্যদানকারী আস্তিক ব্রাহ্মণধর্মের যজ্ঞক্রিয়ায় পশুবধের বিরুদ্ধে আর্য জনমত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বেদান্তীদের কাছে তখন বেদের কর্মকাণ্ডের বদলে জ্ঞানকাণ্ডই প্রাধান্য বিস্তার করতে লাগলো। এ মতানুসারে যাগযজ্ঞাদি কর্ম হচ্ছে হীন আর ব্রহ্মজ্ঞান হচ্ছে শ্রেষ্ঠ এবং মৃত্যুর পর জীবাত্মা পরমাত্মায় লীন হয়, যাগাদি কর্ম হতে জন্ম ও মৃত্যুচক্রের নিরোধ হয় না। তাদের এ ধর্মমতকেই বলা হয় ব্রাহ্মণ্য, যেখানে বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণরাই সর্বেসর্বা। এ সময়কালেই মানবতা বিরোধী বর্ণাশ্রম প্রথা ভারতীয় সমাজে পরিপূর্ণভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসে। সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তখন একটা ভয়ঙ্কর অস্থিরতা ও হতাশা। ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী মতাদর্শিক শ্রমণদের লোভ-লালসাহীন জীবনবোধের প্রতি সাধারণ জনগোষ্ঠীর শ্রদ্ধাবোধ আগে থেকেই ছিলো। তবে এ সময়ে এসে তাঁদের প্রতি মানুষের আগ্রহ খুব স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে ব্রাহ্মণরাও মুণ্ডিত মস্তক শ্রমণ বা তীর্থঙ্করদের দর্শনকে অশুভ মনে করতো।
 .
এখানে উল্লেখ্য যে, বুদ্ধের জন্মের প্রাক্কালে যেহেতু ঈশ্বরে বিশ্বাসী অর্থে ‘আস্তিক’ কিংবা বেদনিন্দক অর্থে ‘নাস্তিক’ শব্দের প্রয়োগ হতো না, বরং পরবর্ত্তীকালের পাণিনির নির্বচন অনুসারে পরলোকে বিশ্বাস না-করা অর্থে নাস্তিক আখ্যায়িত হতো, তাই এই নির্বচন অনুসারে বৌদ্ধ ও জৈনগণ নাস্তিক ছিলেন না। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে নিরীশ্বরবাদী বলাই সঙ্গত। তবে পরবর্তীকালে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের (৩৮০-৪১৮ খ্রিস্টাব্দ) সময় বৈদিকধর্মের পুনরুত্থান হলে তখন থেকে আস্তিক ও নাস্তিক শব্দ দুটোর অন্য অর্থ করা হয়। বেদপ্রামাণ্যকে স্বীকারকারী ও অস্বীকারকারীকে যথাক্রমে আস্তিক ও নাস্তিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই বিভাজন শর্তে ‘বেদের সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত’ এই মতের বিরোধী হিসেবে জৈন ও বৌদ্ধ দর্শনকে নাস্তিক দর্শনের পর্যায়ভুক্ত করা হলেও এটা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না যে জৈন ও বৌদ্ধদর্শন অবশ্যই অবস্তুবাদী ভাববাদী দর্শন। তবে যেকোন বিচারে চার্বাক মতাদর্শীদেরকে শুধু নাস্তিকই নয়, নির্দ্বিধায় জড়বাদী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। চার্বাকরা ছিলেন ভাববাদের প্রচণ্ড বিরোধী। তাই প্রত্যক্ষবাদী চার্বাক মতকে যে গৌতম বুদ্ধও পছন্দ করতেন না এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
 .
বুদ্ধের জন্মের সময়কার ভারতীয় পরিস্থিতি তাঁর প্রবর্তিত মত-ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এটাও আমাদের খেয়াল রাখা দরকার যে, গৌতম বুদ্ধ মূলত দর্শন প্রচারে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি তৎকালীন সমাজ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সহনশীল একটি ধর্মমত প্রচারেই সক্রিয় ছিলেন। বৈদিক সংস্কতির ভয়ানক হিংসার বাতাবরণে অহিংসায় আরাধিত বৌদ্ধধর্ম তৎকালীন মানবজীবনে প্রবহমান দুঃখের কোন চূড়ান্ত সামাজিক সমাধান দিতে না পারলেও গৌতম বুদ্ধ দুঃখ নিবৃত্তির যে ভাববাদী ধর্মমত প্রচার করেন তা ক্রমে ক্রমে লোকপ্রিয় হয়ে ওঠে। এবং তা কেবল ভারতেই সীমিত না থেকে তাঁর অনুসারী ভিক্ষুদের মাধ্যমে ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। বুদ্ধের তিরোধানের পর তাঁর পরবর্তী অনুসারী  দার্শনিকদের মাধ্যমেই অনাত্মবাদী বৌদ্ধদর্শন মূলত তত্ত্বজ্ঞানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি প্রধান বিচারধারার প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় দর্শনে দীর্ঘসময়কাল জুড়ে প্রতিষ্ঠিত দর্শনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়।


গৌতম বুদ্ধের জীবনী (৫৬৩-৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব)
৫৬৩ খ্রিস্টপূর্বের কাছাকাছি সময়ে মতান্তরে ৫৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতের উত্তরপ্রদেশের কাছে নেপালের তরাই অঞ্চলে শাক্যরাজ্যের কপিলাবস্তু নামক রাজধানীর উপকণ্ঠে লুম্বিনী গ্রামে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। তিনি জাতিতে ক্ষত্রিয়, গোত্রে গৌতম এবং তাঁর বাল্যনাম ছিলো সিদ্ধার্থ। তাঁর পিতা শাক্যরাজ শুদ্ধোধন। শুদ্ধোধনের সঙ্গে মদ্দিয় (চুল্লবগ্গ, বিনয়পিটক ৭) এবং দণ্ডপাণিকেও (মজ্ঝিমনিকায়-অঢ্ডকথা; ১/২/৮) শাক্যরাজ বলা হতো। পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে যার অর্থ হলো শাক্যদের প্রজাতন্ত্রী গণসংস্থা অর্থাৎ সিনেট বা পার্লামেন্টের সদস্যগণকেও রাজা বলা হতো। সিদ্ধার্থের জননী মায়াদেবী পিতৃগৃহে যাওয়ার সময় লুম্বিনী গ্রামের উদ্যানে সিদ্ধার্থের জন্ম হয়। সম্রাট অশোক তাঁর রাজত্বকাল কুড়ি বৎসর পূর্ণ হলে (বুদ্ধের জন্মের ৩১৮ বছর পরে) এই স্থানেই এক শিলাস্তম্ভ নির্মাণ করান, যা এখনো অক্ষত আছে বলে রাহুল সাংকৃত্যায়নের বক্তব্য থেকে জানা যায়।
 .
সিদ্ধার্থের জন্মের এক সপ্তাহ পরেই তাঁর মাতার মৃত্যু হয় এবং তিনি মাসী তথা বিমাতা প্রজাপতি গৌতমীর কাছে পালিত হন। তরুণ সিদ্ধার্থের সংসার বিমুখতা ও চিন্তাচ্ছন্নতা দেখে পিতা শুদ্ধোধনের আশঙ্কা হতে থাকে যে তাঁর পুত্রও হয়তো সন্ন্যাসী হয়ে গৃহত্যাগ করবেন। তাই তিনি প্রতিবাসী কোলিয় গণের (প্রজাতন্ত্রের) সুন্দরী কন্যা ভদ্রা কাপিলায়নীর (বা যশোধরা) সঙ্গে পুত্রের বিবাহ দেন। এছাড়া কথিত আছে যে, সিদ্ধার্থ বিশ্বদুঃখের চারটি কারণ যথাসময়ে দেখার পর বিশ্বের শিক্ষক হবেন, নয়তো বিশ্বের সম্রাট হবেন- গণৎকারের এরূপ কথা শুনে শঙ্কিতমনা শুদ্ধোধন সর্বদা মৃত্যু, রোগ প্রভৃতি হতে মুক্ত আনন্দময় প্রাসাদে পুত্রের ঘোরাফেরার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ অবস্থা চলতে থাকলেও বহিরুদ্যানে ভ্রমণ করার সময় সিদ্ধার্থ একদিন এক জরঠ জরাতুর বৃদ্ধকে, আরেকদিন আহত জ্বরে কাঁপছে এমন রুগ্ন লোককে, অন্য একদিন ক্রন্দনরত লোকজনের দ্বারা অনুসৃত শ্মশানের দিকে নীত একটি শবদেহকে এবং অন্য আরেকদিন পীত বস্ত্র পরিহিত আনন্দিত শান্ত বিচরণশীল একজন সন্ন্যাসীকে দেখেন। এই দুঃখ-জরা দেখে এরপরই জগতের দুঃখের কারণ খুঁজতে তিনি সতত চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লেন। এরইমধ্যে সিদ্ধার্থের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পুত্রকে তিনি তাঁর চিন্তার রাহু (গ্রাসকারী) মনে করে নাম দেন রাহুল। ইতোমধ্যে সংসারের প্রতি তাঁর বীতরাগ দৃঢ়তর হয় এবং এক রাত্রিতে ৫৩৪ মতান্তরে ৫৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উনত্রিশ বছর বয়সে তিনি নিঃশব্দে গৃহত্যাগ করেন।
 .
সেই সময়ে তাপসদের বিশেষ কদর ছিলো। সিদ্ধার্থের পিতার কাছে কাল, দেবল প্রভৃতি তাপস আসতেন। গৃহত্যাগী হয়ে একদিন এক তপোবনে তিনি জানতে পারলেন যে নিঃশ্রেয়সের জ্ঞান আছে আরাল কালাম নামে এমন একজন তাপস বিম্বপ্রকোষ্ঠে বাস করেন। গৃহত্যাগী সিদ্ধার্থ প্রব্রজ্যা (সন্ন্যাস) গ্রহণ করে প্রথমে আরাল কালামের নিকট যান। এ ব্যাপারে চুনার বৎসরাজ উদয়ের পুত্র বোধি রাজকুমারকে বুদ্ধ স্বয়ং বলেছেন-
রাজকুমার! বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির পূর্বে …আমারও মনে হয়েছিলো- ‘সুখের দ্বারা সুখ প্রাপ্য নয়, দুঃখের মধ্যে দিয়েই সুখের আগমন ঘটে।’ তাই …আমি তরুণ বয়সে, যখন আমার কৃষ্ণ কেশ ছিল, যৌবন ছিল, মাতাপিতাকে অশ্রুতে নিমগ্ন করে …প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম। …(প্রথমে) আলার কালামের নিকট …গেলাম। …” (মজ্ঝিমনিকায়: ২/৪/৫) [সূত্র- দর্শন-দিগদর্শন/ রাহুল সাংকৃত্যায়ন]
 .
সিদ্ধার্থ কিভাবে জরা, মরণ ও রোগ থেকে জীবের মুক্তি হয় তা তাপসের কাছে জানতে চাইলেন। আলার কালাম সংক্ষেপে শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তের উপদেশ দিলেন, সংসারের উৎপত্তি ও বিবর্তন বুঝালেন, তত্ত্বের শিক্ষা দিয়ে তাঁকে নৈষ্ঠিক পদলাভের উপায় হিসেবে কিছু যোগবিধি শিক্ষা দেন। তাঁর কথিত এই বেদান্তজ্ঞান সিদ্ধার্থের মনোমত হলো না বা তাঁর অনন্ত জিজ্ঞাসা তাতে পূর্ণ হয়নি। সেখান থেকে তিনি উদ্দক রামপুত্তের (উদ্রক রামপুত্র) নিকট যান এবং কিছু সাংখ্য ও যোগদর্শনের শিক্ষ নেন। কিন্তু তাতেও তাঁর সন্তুষ্টি এলো না। অতঃপর তিনি বুদ্ধগয়ার নিকট উরুবেলা বনে এসে নিরঞ্জনা নদীর তটে প্রায় ছয় বছর ধরে নিজেই যোগ এবং কঠোর অনশনের তপস্যা করেন। সেখানে সিদ্ধার্থের সাথে আরো পাঁচজন ভিক্ষু ছিলেন। তাঁরা সকলেই জন্মমৃত্যুকে জয় করবে এই ভেবে তিলতণ্ডুল মাত্র গ্রহণ করে কঠোর অনশন ব্রত পালন করেন। তাঁদের মধ্যে বুদ্ধের অত্যন্ত কৃচ্ছ্র তপশ্চরণ দেখে তাঁরা সকলে তাঁকে তাঁদের নেতা মনে করেন। একদিন তিনি ক্ষুৎ-পিপাসায় পীড়িত হয়ে মূর্চ্ছিত হয়ে যান। সঙ্গিরা সে অবস্থায় তাঁকে দেখে মৃত মনে করেন। কিন্তু সংজ্ঞা লাভ করে পুনরায় তিনি কঠোর তপস্যা শুরু করেন। এরকম দুষ্কর তপঃচর্চার পরিণামস্বরূপ বুদ্ধ অত্যন্ত কৃশ অস্থিচর্মসার হয়ে গেলেন। এই তপস্যা সম্মন্ধে বুদ্ধ স্বয়ং বলেছেন-
আমার দেহ দৌর্বল্যের চরম সীমায় পৌঁছেছিল। …আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অশীতিপদ বৃদ্ধের গ্রন্থি মজ্জার মতো …শিথিল হয়ে গিয়েছিল …উটের মতো আমার পৃষ্ঠদেশও কুব্জ হয়েছিল… মেরুদণ্ড বক্র হয়েছিল। প্রাচীন শালের কড়ির ন্যায় আমি দেহমনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। …আমার চক্ষুর মণি কোটরাগত হয়েছিল। তপ্ত বাতাসে মাঠের শস্য যেমন মলিন হয়ে পড়ে আমার মস্তিষ্ক, বোধশক্তি সেইরকম ম্লান হয়ে যায়। …মল-মূত্র ত্যাগের জন্য উঠতে গেলে তা সেখানেই হয়ে যাচ্ছিল। …অঙ্গসঞ্চালন করলে বা হাত দিয়ে গাত্রমার্জনা করলে দেহের রোম ঝরে যেত। …লোকে …বলত : ‘শ্রমণ গৌতম কালো’। কেউ বলত: ‘শ্যামবর্ণ’। …‘পাণ্ডুবর্ণ।’ আমার সেই উজ্জ্বল সুন্দর গৌরবর্ণ চর্ম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। …কিন্তু …এই তপস্যা …দ্বারা সেই চরম …দর্শন …কে পাইনি। তখন চিন্তা করলাম ‘বোধি লাভের কি অন্য কোনো মার্গ আছে?’ …মনে হলো : ‘আমি পিতা শুদ্ধোধন শাক্যের জমিতে জামগাছের ঠাণ্ডা ছায়ায় বসে …প্রথম যে ধ্যান করেছিলাম হয়ত তাই বোধিমার্গ।’ …এই প্রকার অনশনকিষ্ট দুর্বল দেহে ধ্যান সম্ভব হয় না। …অতঃপর পুনরায় আমি স্থূল আহার-ডাল-ভাত গ্রহণ করতে লাগলাম। …তখন আমার নিকট পাঁচজন ভিক্ষু থাকতেন। …আমাকে খাদ্য …গ্রহণ করতে দেখে …তাঁরা উদাসীন হয়ে চলে গেলেন।…” (মজ্ঝিমনিকায়: ২/৪/৫) [সূত্র- দর্শন-দিগদর্শন/ রাহুল সাংকৃত্যায়ন]
 .
কথিত আছে, এরপর তিনি একটি বিশাল পিপল (অশ্বত্থ) গাছের নীচে তপস্যারত হন। সুজাতা নামে এক কৃষককন্যা তাঁকে পায়েস দিলে তিনি সেই পায়েসের কিছুটা খেয়ে স্নান করেন এবং সেই সন্ধ্যায় পুনরায় সেই পিপল গাছের তলায় সাধনায় বসে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তাঁর অস্থি ও রক্ত শুকিয়ে গেলেও তিনি দুঃখকষ্টের সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত আসন ত্যাগ করবেন না। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর ধ্যানে মগ্ন হন তিনি। ৪৯ দিন এই বৃক্ষটির নীচে ধ্যানরত ছিলেন। ৪৯তম দিবসের প্রত্যুষে তিনি দিব্যজ্ঞান বা বোধি লাভ করেন। সেদিন ছিলো বৈশাখী পূর্ণিমার রাত। এ রাতের প্রথম যামে পূর্বজন্মের জ্ঞান, দ্বিতীয় যামে দিব্যচক্ষু বিশুদ্ধ হয়, অন্তিম যামে দ্বাদশ প্রতীত্যসমুৎপাদ এবং অরুণোদয়ে সর্বজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি দুঃখের রহস্য উপলব্ধি করে অবশেষে বুঝতে পারেন কেন সংসার দুঃখ ও কষ্টে পরিপূর্ণ এবং জীব কিভাবে তা অতিক্রম করতে পারে। এটিই হচ্ছে তাঁর দিব্যজ্ঞান বা বোধিলাভ।
এ ব্যাপারে বুদ্ধ স্বয়ং অন্যত্র বলেছেন-
এক রমণীয় স্থানে, অরণ্যপ্রান্তে নিরঞ্জনা নদীকে প্রবাহিত দেখেছিলাম। নদীর ঘাট ছিল শ্বেতমর্মর নির্মিত। এইরূপ স্থানই ধ্যানের যোগ্য মনে করে উপবেশন করলাম। (অতঃপর) …জন্মের কু-পরিণাম জেনে …অনুপম নির্বাণ প্রাপ্ত হলাম …আমার জ্ঞান দর্শনের পর্যায়ভুক্ত হলো, চিত্তের মুক্তি অচল হলো, এই জন্মই অন্তিম, পুনর্জন্ম নেই (হবে না)।” (মজ্ঝিমনিকায়: ১/৩/৬)
 .
সিদ্ধার্থ তাঁর উনত্রিশ বছর বয়সে (৫৩৪ খ্রিস্টপূর্ব) গৃহত্যাগ করে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে যোগ তপস্যা করে তারপর ধ্যান ও চিন্তন দ্বারা ছত্রিশ বছর বয়সে (৫২৮ খ্রিস্টপূর্ব) বোধিলাভ করে গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত হন। তাঁকে বুদ্ধ, তথাগত, সুগত, শ্রাবক, শাক্যপুত্রীয় ইত্যাদিও বলা হয়। এরপর পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে তিনি স্বীয় ধর্ম প্রচার করে ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আশি বছর বয়সে কুশীনগরে মহানির্বাণ লাভ করেন।
.

বুদ্ধের ধর্মপ্রসার
বোধিলাভের পর তিনি মনস্থ করেছিলেন যে আরাল কালাম ও উদ্দক রামপুত্তকে ধর্মের দেশনা (উপদেশ) দেবেন। কিন্তু তাঁরা জীবিত নেই জেনে তিনি ঠিক করেন, যে পাঁচজন ভিক্ষু তাঁকে ত্যাগ করে ‘ঋষিপত্তন’ মৃগদাবে (Deer Park) চলে গিয়েছেন তাঁদেরকে ধর্মোপদেশ দেবেন। সেকারণে বোধিবৃক্ষ ত্যাগ করে তিনি প্রথমেই বারাণসীর বর্তমান সারনাথের কাছে মৃগদাবে গিয়ে তাঁর ভূতপূর্ব পাঁচ সঙ্গির নিকট নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। তখন ছিল বর্ষাকাল এবং প্রথম ধর্মোপদেশ দানের সে দিনটি ছিলো আষাঢ়ে পূর্ণিমার দিন। এই ঘটনাকে ‘ধর্মচক্র প্রবর্ত্তন’ (set in motion the wheel of the Law) বলা হয়। এই উপদেশ ‘ধর্মচক্র প্রবর্ত্তনসূত্র’ নামে প্রসিদ্ধ। সারনাথে ধর্মচক্রের প্রথমবার প্রবর্ত্তন হয়েছিলো বলে সারনাথ ভিক্ষুদের এক পবিত্র তীর্থস্থান।
 .
বুদ্ধের প্রথম শিষ্য হচ্ছেন ওই পাঁচজন ভিক্ষু। বারাণসীর এক বণিকপুত্র যশ ও সংসারে বিরক্ত হয়ে ঋষিপত্তনে এসে ভগবান্ বুদ্ধের উপদেশ লাভ করে ভিক্ষু হয়। এই সংবাদ পেয়ে তার ৫৪ জন মিত্রও এসে ভিক্ষু হয়। এভাবে প্রথম চার মাসে ৬০ জন ভিক্ষু নিয়ে বুদ্ধের ধর্মোপদেশ শুরু হয়। বুদ্ধ একটি সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রমে ক্রমে সঙ্ঘের নিয়ম তৈরি হলে সঙ্ঘসদস্যতার জন্য একটি আইন তৈরি হয়। তাকে ‘উপসম্পদা’ বলে। প্রারম্ভে যখন সঙ্ঘ ছিলো না তখন প্রথম শিষ্যদের ‘এহি ভিক্ষো’ এই বাক্যে ‘উপসম্পদা’ (দীক্ষা) হতো। প্রথম পঞ্চভিক্ষুদের ‘উপসম্পদা’ এভাবেই হয়েছিলো। পরবর্তীকালে বুদ্ধ ভিক্ষু আনন্দের অনুরোধে স্ত্রীদের সঙ্ঘে প্রবেশের অনুমতি দিলে প্রথম ভিক্ষুণী হিসেবে প্রজাপতি গৌতমীর (সিদ্ধার্থের বিমাতা) ‘উপসম্পদা’ হয়েছিলো ভিক্ষুদের গুরুধর্ম স্বীকারের মাধ্যমে।
 .
বর্ষাকাল শেষে সারনাথ থেকে বুদ্ধ প্রথম ৬০ জন ভিক্ষুকে ভিন্ন ভিন্ন দিকে ধর্মপ্রচারের জন্য পাঠালেন। তাঁদেরকে প্রেরণের সময় তিনি এভাবে সম্বোধন করতেন- “ভিক্ষুগণ! বহুজনের হিতার্থে, সুখার্থে মানুষকে দয়া করার জন্য, দেবপ্রতিম মনুষ্যের প্রয়োজন-হিত-সুখের নিমিত্ত বিচরণ করো। দু’জন একসঙ্গে গমন কর না। …আমিও …উরুবেলা …সেনানীগ্রামে …ধর্মোপদেশ বিতরণ করতে যাচ্ছি।” (সূত্র: দর্শন-দিগদর্শন/ রাহুল সাংকৃত্যায়ন)
 .
উরুবেলায় মহাকাশ্যপ ও তাঁর ভাই ছিলেন দুর্দমনীয় খ্যাতিবান ব্রাহ্মণ শাস্ত্রজ্ঞ। বুদ্ধের ধর্মোপদেশে তাঁরা বুদ্ধের কাছে দীক্ষিত হয়।  মগধের রাজা বিম্বিসার বা শ্রেণিক (৫৪৪-৪৯৩ খ্রিস্টপূর্ব) এই মহাকাশ্যপদেরকে বহু সমাদর করতেন। তিনি যখন জানলেন যে তারা বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছে, তখন তিনি আশ্চর্য হন এবং বুদ্ধের ব্যাপক খ্যাতি সম্পর্কে অবগত হয়ে তিনিও তাঁর উপাসক হন। সে সময় গৃহস্থ শিষ্যকে উপাসক বা উপাসিকা বলা হতো। বুদ্ধের ধর্মপ্রসারে এটি বিম্বিসারোপসংক্রমণ নামে অন্যতম প্রধান ঘটনা।
 .
ধীরে ধীরে গৌতম বুদ্ধের খ্যাতি এভাবেই ছড়াতে থাকে যে, খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে প্রসিদ্ধ ষোলটি জনপদের মধ্যে বিম্বিসারের মগধ, প্রসেনজিতের কোশল, উদয়নের বৎস এবং চণ্ডপ্রদ্যোতের অবন্তি এই প্রসিদ্ধ চারটি রাজ্যের যথাক্রমে রাজগৃহ, শ্রাবস্তী, কৌশাম্বী ও উজ্জয়িনী এই চারটি রাজধানী বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রস্থল হয়েছিলো।
 .
এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভ্রমণকে বলা হতো ‘চারিকা’। গৌতম বুদ্ধ ভিক্ষুদের সাথে চারিকা করতেন, ভিক্ষুদের সন্দেহ নিরসন করতেন, তাদের ধর্মবিনয় (ভিক্ষুদের নিয়ম) শিক্ষা দিতেন, যে তীথঙ্করগণ প্রশ্ন করতেন তাঁদের সাথে সংলাপ করতেন এবং গৃহস্থদের ধর্মোপদেশ দিতেন। এভাবে চারিকা করতে করতে বুদ্ধ কপিলাবস্তুতে প্রত্যাবর্তন করে কিছু দিন সেখানে ধর্মোপদেশ প্রদান করেন। সেসময় তিনি তাঁর পিতা, পত্নী, পুত্র রাহুল, ঈর্ষী দেবদত্ত ও রাজসভাসদের অনেককে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করেন। কপিলাবস্তু থেকে বুদ্ধ রাজগৃহে যান। সেখানে প্রখ্যাত শ্রমণ সঞ্জয় তাঁর সঙ্ঘের সাথে থাকতেন। সে সঙ্ঘে আরো ছিলেন মগধের প্রখ্যাত পণ্ডিত সারিপুত্র ও মৌদ্গলায়ণ। তাঁরা ভিক্ষু অশ্বজিতের মুখে শ্রমণ গৌতম বুদ্ধের শিক্ষার সার শুনেছিলেন। তাঁরাও বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নিয়ে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এভাবেই ধীরে ধীরে বৌদ্ধধর্ম প্রসার লাভ করে।
 .
বুদ্ধ একদিকে যেমন ভোগময় জীবনের অত্যন্ত বিরোধী ছিলেন, অন্যদিকে দেহকে কষ্ট দেয়া মূর্খতা বলে মনে করতেন। কর্মকাণ্ড ও ভক্তিবাদ অপেক্ষা জ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রতিই ছিলো তাঁর অধিক সমর্থন। এ কারণেই তিনি তাঁর জীবৎকালে এবং পরেও প্রতিভাবান ব্যক্তিগণকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছেন। ফলে সুদূর উজ্জ্বয়িনীর রাজপুরোহিত মহাকাত্যায়নের ন্যায় পণ্ডিত ব্রাহ্মণও তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও স্বার্থ-বিরোধী বৌদ্ধধর্মের প্রতি প্রারম্ভিককালের ব্রাহ্মণদের বিদ্বেষকে নিয়ন্ত্রিত করেন।
 .
বছরের আটটি মাস ভ্রমণ করার পর গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর অনুগামী ভিক্ষুগণ বর্ষা ঋতুতে চারিকা বন্ধ করে একত্র হতেন। গৃহস্থ শিষ্য অর্থাৎ উপাসকরা তাঁদেরকে বর্ষাবাসের নিমন্ত্রণ করতো। উপাসকগণ তাঁদের ভিক্ষার ব্যবস্থা করতো এবং ভিক্ষুরা এই উপাসকদেরকে ধর্মোপদেশ দিতেন। এভাবে উভয়ের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে একধরনের একতা প্রতিষ্ঠিত হতো। বর্ষার শেষে একটি উৎসব হতো, যার নাম ছিলো ‘পবারণা’ (প্রবরণা)। এই উৎসবে ভিক্ষু ও উপাসকগণ সম্মিলিত হতেন এবং একজন জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু সমস্ত ভিক্ষু ও উপাসককে ধর্মোপদেশ দিতেন। তাঁরা দিনে উপোসথ (ব্রত) পালন করে সন্ধ্যায় সম্মিলিত হতেন। এক ভিক্ষু অন্যের পাপ আবিষ্কার করতেন এবং তিনি পাপ স্বীকার করতেন। পরিশেষে উপাসকদের দ্বারা প্রদত্ত সামগ্রি ভিক্ষুদের মধ্যে বণ্টন করা হতো। প্রত্যেক পঞ্চম বর্ষে বিশেষ সমারোহে প্রবরণা উৎসব হতো। একে পঞ্চবার্ষিক পরিষদ্ বলা হতো।
.
ফা-হিয়েনের (৩৯৯-৪২৪ খ্রি.) ভ্রমণবিবরণ থেকে জানা যায় ‘খাশে’র রাজা পঞ্চবার্ষিক পরিষদ্ ডেকে তাতে নিজের সর্বস্ব দান করেছিলেন। হিউয়েন সাং (৬২৯-৬৪৫ খ্রি.) কুচা ও বামিয়ানে এই উৎসব দেখেছেন। ৫২৯ খ্রিস্টাব্দে চীনের মহারাজ পঞ্চবার্ষিক পরিষদ্ আমন্ত্রণ করেছিলেন বলে জানা যায়। (সূত্র: নাস্তিকদর্শনপরিচয়ঃ/ ড. বিশ্বরূপ সাহা)
 .
পাবা নগরীতে চণ্ড নামে কোন এক শিল্পী শিষ্যের আমন্ত্রণে শূকরের মাংস খেয়ে বুদ্ধ অতিসার রোগাক্রান্ত হন। এ অবস্থায় তিনি গোরখপুর জেলার অন্তর্গত কুশীনগর গ্রামের উপকণ্ঠে শালবনে বৈশাখী পূর্ণিমা রাতে পরিনির্বাণ (দেহত্যাগ) করেন। শিষ্যগণ দেহসৎকার করে তাঁর চিতাভস্ম বিভিন্ন উপজাতির প্রতিনিধিদেরকে এবং মগধের রাজা অজাতশত্রুকে (৪৯৩-৪৬১ খ্রিস্টপূর্ব) প্রদান করেন। ভস্মশেষের উপর স্তুপ নির্মিত হয়।
.
বুদ্ধের জন্ম, বোধিলাভ ও পরিনির্বাণ এই তিনটি ঘটনাই বৈশাখী পূর্ণিমাতে হয়েছিলো বলে বৈশাখী পূর্ণিমাকে বৌদ্ধগণ সশ্রদ্ধ সমারোহে উৎসবরূপে পালন করে থাকেন। বৌদ্ধধর্মে চারটি তীর্থস্থান রয়েছে-  কপিলাবস্তুর লুম্বিনী যেখানে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছে, বোধিগয়া যেখানে বুদ্ধের বোধিলাভ হয়েছে, সারনাথ যেখানে প্রথম পাঁচজন ভিক্ষুকে ধর্মোপদেশ দান অর্থাৎ প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন হয়েছে এবং কুশিনারা যেখানে বুদ্ধের পরিনির্বাণ হয়েছিলো। এই তীর্থগুলোর মধ্যে বোধগয়া ভারতের বিহার রাজ্যের একটি প্রধান নগর এবং বাকি তিনটির স্থান ভারতের উত্তর প্রদেশের পূর্বভাগে অবস্থিত।
 .
বৌদ্ধধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম ‘ত্রিপিটক’। ‘পিটক’ শব্দের অর্থ বাক্স। ত্রিপিটক মানে তিনটি পিটকের সমাহার। এই তিনটি পিটক হচ্ছে- সুত্তপিটক, অভিধম্মপিটক ও বিনয়পিটক। সুত্তপিটকে ধর্মবিষয়ক বার্তা, অভিধম্মপিটকে দার্শনিক বিষয় এবং বিনয়পিটকে সঙ্ঘের আচার বিষয়ে গৌতম বুদ্ধের উপদেশ বণিত হয়েছে।
.
বুদ্ধ কোন গ্রন্থ রচনা করেন নি, তিনি মৌখিকভাবে উপদেশ দিয়েছেন। দেহত্যাগের পূর্বে শিষ্য ভিক্ষুদের এক সূত্রে সংগঠিত করার জন্যে সঙ্ঘের স্থাপনা করে আচারের নিমিত্তে বিনয়ের উপদেশ দিয়েছেন, যা তাঁর পরিনির্বাণের পর পালিগ্রন্থ ‘বিনয়পিটকে’ সংগৃহীত হয়েছে। জনতার মনে সহজে পৌঁছানোর জন্য গৌতম বুদ্ধ যে লোকভাষার মাধ্যমে উপদেশ দিতেন, সে ভাষাটি পালি ভাষা নামে প্রসিদ্ধ।
বুদ্ধের মৃত্যুর পর প্রথম ধর্মসঙ্গীতিতে বৌদ্ধ ভিক্ষু উপালি বিনয়ের সংগ্রহ করেন। বুদ্ধের তিনজন শিষ্য উপদেশগুলিকে ত্রিপিটকে সংগৃহীত করেন।
.
.
বৌদ্ধ সাহিত্য
গৌতম বুদ্ধ জীবৎকালে মুখে মুখে তাঁর বাণী প্রচার করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বাণী লিপিবদ্ধ করার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলো। জীবৎকালেই তাঁর দুই প্রিয় ও প্রধান শিষ্য সারিপুত্র ও মৌদ্গল্যায়নের জীবনাবসান হয়। এর ফলে বুদ্ধের মহাপ্রয়াণের পর বৌদ্ধমত বিকৃতির আশঙ্কা দেখা দেয়। এই আশঙ্কার কারণে অনিরুদ্ধ মহাকাশ্যপ ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মগধের মহারাজ অজাতশত্রুর সহায়তায় রাজধানী রাজগৃহে এক বৌদ্ধসভার আয়োজন করেন। এই সভায় বহুসংখ্যক বৌদ্ধ অনুগামীদের উপস্থিতিতে বুদ্ধবাণী সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এই সভা ‘মহাসঙ্গীতি’ নামে পরিচিত। বুদ্ধের অনুগামীদের এরূপ চারটি সভার বিবরণ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে এই বাণী সংগৃহিত হয়ে বৌদ্ধ ত্রিপিটকের সৃষ্টি হয়।
.
বৌদ্ধ সাহিত্যে তিনটি পিটক রয়েছে, যাদেরকে একসাথে ‘ত্রিপিটক’ বলা হয়। এগুলি হচ্ছে বিনয়পিটক, সূত্রপিটক ও অভিধম্মপিটক। ত্রিপিটক পালি ভাষায় রচিত। বিনয়পিটকে বৌদ্ধসঙ্ঘ বিষয়ক নির্দেশ এবং সঙ্ঘের পালনীয় বিধি ও অনুশাসন সংকলিত হয়েছে। সূত্রপিটকে মূলত বুদ্ধের বাণী, উপদেশ এবং শিষ্যদের সঙ্গে কথোপকথন স্থান পেয়েছে। অভিধম্মপিটক পরবর্তীকালের সংকলন। রাজা অশোকের পৃষ্ঠপোষকতার তৃতীয় মহাসঙ্গীতির পর এর আবির্ভাব ঘটে।
 .
বিনয়পিটক : গৌতম বুদ্ধের উপদেশের উপর ভিত্তি করে বৌদ্ধ সঙ্ঘের আচার সম্বন্ধীয় নিয়ম এই পিটকে প্রতিপাদিত হয়েছে। এর তিনটি ভাগ- সুত্তবিভঙ্গ, খণ্ডক ও পরিবার।
সুত্তবিভঙ্গ দুই ভাগে বিভক্ত- ভিক্খুবিভঙ্গ ও ভিক্খুনীবিভঙ্গ। এখানে বিশদভাবে ভিক্ষু ও ভিক্ষুনীদের অবশ্য পালনীয় নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। এমন কিছু অপরাধের উল্লেখ রয়েছে যার কারণে ভিক্ষু বা ভিক্ষুনী পতিত হয়। এরকম অপরাধের সংখ্যা ২২৭ টি। প্রত্যেক পূর্ণিমাতে ভিক্ষুসঙ্ঘের সম্মুখে তাদেরকে এরূপ কৃত পাপের পাঠ করতে হয়, এ হচ্ছে তাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত। সুত্তবিভঙ্গে এসকল অপরাধ ও পালনীয় নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।
খণ্ডকে দু’টি গ্রন্থ রয়েছে- মহাবগ্গ ও চুল্লবগ্গ। এগুলোতে ভিক্ষুসঙ্ঘের সাথে সম্বন্ধ রাখার বিষয় বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিভাবে সঙ্ঘে প্রবেশ করা যায়, নানা সময়ে কোন্ কোন্ ব্রত পালন করতে হয়, চাতুর্মাস্য কিভাবে উদ্যাপন করতে হয়, ভিক্ষু কিরূপ কাপড় পড়বে, ভোজনের জন্য কোন্ নিয়ম পালন করবে ইত্যাদি কথা রয়েছে মহাবগ্গ ও চুল্লবগ্গে।
‘পরিবার’ হচ্ছে বিনয়পিটকের সার। এতে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বৌদ্ধভিক্ষুদের নিয়ম ও কর্তব্য প্রতিপাদিত হয়েছে।
 .
সুত্তপিটক : সুত্তপিটক হচ্ছে বুদ্ধের ধর্ম বিষয়ক বার্তা। এই পিটকের অন্তর্গত পাঁচটি নিকায় রয়েছে- ১.দীঘনিকায়, ২.মজ্ঝিমনিকায়, ৩.অঙ্গুত্তরনিকায়, ৪.সংযুক্তনিকায়, ৫.খুদ্দনিকায়।
দীঘনিকায়ে তিনটি খণ্ড এবং এগুলোর মধ্যে সব সমেত ৩৪টি দীর্ঘাকার সূত্র রয়েছে। এরমধ্যে সর্বপ্রসিদ্ধ হচ্ছে মহাপরিনিব্বাণসুত্ত। দীঘনিকায়ের প্রত্যেক সুত্তে বুদ্ধের সংবাদ সঙ্কলিত আছে। এই সংবাদের বিষয় অনেক ধরনের, যেমন- যজ্ঞের উপযোগ আছে কিনা, কোন ব্যক্তির জন্ম উচ্চকুলে বা নীচবংশে কেন হয় এবং তা কি নিজের গুণকর্ম অনুসারে হয়, নির্বাণ, পুনর্জন্ম প্রভৃতি।
মজ্ঝিমনিকায়ে মধ্য আকারের সর্বমোট ১২৫টি সুত্ত রয়েছে। এই সুত্তগুলি দীঘনিকায়ের তুলনায় ছোট।
অঙ্গুত্তরনিকায় ১১টি খণ্ডে বিভক্ত এবং সর্বমোট ২৩০০ সুত্ত রয়েছে।
সংযুক্তনিকায় ৫টি বগ্গে (বর্গে) বিভক্ত এবং মোট ৫৬টি সুত্ত রয়েছে।
খুদ্দনিকায়ের অন্তর্গত ১৫টি বিবিধ পুস্তক। এগুলো হচ্ছে- খুদ্দকপাঠ, ধম্মপাদ, উদান, ইতিবুতক, সুত্তনিপাত, বিমানবত্থু, থেরগাথা, থেরীগাথা, জাতক, নিদ্দেস, পহিসম্মিদা, অপদান, বুদ্ধবংস, চরিয়াপিটক।
ধম্মপাদ বৌদ্ধদের কাছে হিন্দুদের গীতার মতোই পবিত্র গ্রন্থবিশেষ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের দার্শনিক তত্ত্বসমূহের উপর রচিত একটি উৎকৃষ্ট এবং বৌদ্ধ দর্শন অনুধাবনের অন্যতম মূল অবলম্বন এই ধম্মপদ। ধম্মপদকে বৌদ্ধ নীতিশাস্ত্রের আকর গ্রন্থ হিসেবেও বিবেচনা করা যায়।
জাতককে ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে বিশেষ উপযোগী গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাতে বুদ্ধের পুনর্জন্মের কথারূপে প্রায় ৫৫০টি গাথা বর্ণিত হয়েছে। তা বৌদ্ধধর্ম অনুসারে নির্বাণপ্রাপ্তির জন্য অত্যন্ত আবশ্যক মনে করা হয়।
 .
অভিধম্মপিটক : এই পিটকে বৌদ্ধধর্মের দার্শনিক বিচার ও আধ্যাত্মবাদের আলোচনা রয়েছে। এর অন্তর্গত গ্রন্থসংখ্যা সাতটি- ১.ধম্মসঙ্গনি, ২.বিভঙ্গ, ৩.ধাতুকথা, ৪.পুলপঞ্জতি, ৫.কথাবত্থু, ৬.যমক, ৭.পট্ঠান।
এই সাতটির মধ্যে প্রসিদ্ধ কথাবত্থুর মহত্তপূর্ণ রচনা অশোকের গুরু মোগ্গলিপুত্ত করেছেন। আত্মা কী, তার কোন পৃথক সত্তা আছে কিনা, নির্বাণের স্বরূপ কী, গৃহপতিও কি অর্হৎপদ প্রাপ্ত হতে পারে- এসকল বিষয় কথাবত্থুতে আলোচিত হয়েছে।
 .
পালি ভাষায় রচিত এই ত্রিপিটক গ্রন্থগুলি বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বচনরূপে সঙ্কলিত হলেও বুদ্ধের জীবদ্দশায় লিখিত হয় নি। বুদ্ধের অনুসারীদের মুখে মুখে তা সংরক্ষিত হয়ে বুদ্ধের পরিনির্বাণের বহুকাল পরে লিখিত আকারে সঙ্কলিত হয়েছে। তবে ত্রিপিটকের অনেকগুলো ভাগ বুদ্ধের নির্বাণের এক শতাব্দি পর বৌদ্ধধর্মের দ্বিতীয় ধর্মসঙ্গীতিকালে সঙ্কলিত হয়েছে বলে জানা যায়। আর ত্রিপিটকের কথাবত্থু প্রভৃতি অংশের রচনা অশোকের সময়ে (২৬৯-২৩২ খ্রিস্টপূর্ব) হয়েছে।
.
এছাড়া বৌদ্ধসাহিত্যে ত্রিপিটক বহির্ভূত কিছু প্রসিদ্ধ পালিগ্রন্থ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে রচিত ‘মিলিন্দ পনহো’। বৌদ্ধ দার্শনিক নাগসেনের (১৫০খ্রিস্টপূর্ব) সাথে শিয়ালকোটের গ্রিক রাজা ও দার্শনিক মিনান্দরের (মিলিন্দ) দার্শনিক বিতর্কের আকর্ষণীয় বর্ণনা অন্তর্ক্তুক্ত রয়েছে। চতুর্থ খ্রীস্টাব্দে মগধনিবাসী বুদ্ধঘোষ রচিত পালিভাষায় ত্রিপিটকের ভাষ্য বা ব্যাখ্যারূপে ‘অট্ঠকথা’। তিনি পববর্তীকালে সিংহলদেশে (শ্রীলঙ্কা) গিয়ে এটি রচনা করেন, কিন্তু ত্রিপিটকভাষ্য শেষ করে যেতে পারেন নি। অবশিষ্ট কাজ সম্পূর্ণ করেন বুদ্ধদত্ত, ধম্মপাল, মহানাম, নবমোগ্গলান ও চুল্লঘোষ নামক আচার্যগণ। তবে বুদ্ধঘোষের সবচেয়ে মহত্ত্বপূর্ণ রচনা হচ্ছে ‘বিসুদ্দমগ্গ’ (বিশুদ্ধমার্গ), যা বৌদ্ধদর্শনের অত্যন্ত প্রামাণিক সিদ্ধান্তগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
.
এখানে উল্লেখ্য যে, সময়োপযোগী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বুদ্ধের দার্শনিক তত্ত্ব বিষয়ে বৌদ্ধ অনুগামীদের মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তীকালে বুদ্ধের দার্শনিক তত্ত্বকে কেন্দ্র করে নানা উপসম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে। এসব উপসম্প্রদায়ের মধ্যে মতপার্থক্য বিস্তর এবং তাঁদের দার্শনিক তত্ত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন ভিন্ন। পরবর্তীকালের বৌদ্ধ চিন্তাবিদদের মধ্যে নাগার্জুন (খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী), অশ্বঘোষ (খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী), অসঙ্গ (খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী), বসুবন্ধু (খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দী), দিঙনাগ (খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী), ধর্মকীর্তি (খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী), শান্তরক্ষিত (অষ্টম শতাব্দী), কমলশীল (নবম শতাব্দী) প্রমুখের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال