সাম্প্রতিকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দার্শনিক চিন্তাধারাকে চিহ্নিত করার জন্য ‘আমেরিকার দর্শন’ আখ্যাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমেরিকা বলতে কেবল মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্র বুঝায় না। সে কারণে কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দর্শনের বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্য ‘আমেরিকার দর্শন’ কথাটি উপযুক্ত নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধানত ইউরোপ মহাদেশ থেকে আগত অধিবাসীদের দ্বারা গঠিত হয়েছে। এ জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইউরোপ মহাদেশে ঊনবিংশ শতকে প্রচলিত ভাবধারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রচলিত ছিল। দর্শনের ক্ষেত্রেও ইউরোপের বিভিন্ন ধারা এবং উপধারার সাক্ষাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দার্শনিকদের মধ্যে পাওয়া যায়। ইউরোপ থেকে ভিন্নভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দর্শনকে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না বলে বিগত শতকে দর্শনের ইতিহাসে ‘মার্কিন দর্শন’ বলে কোনো বিশেষ দর্শনের পরিচয় পাওয়া যায় না। তথাপি অর্থনৈতিক কারণে ইউরোপ ত্যাগকারী জনসমষ্টি একটি অনাবাদী ভূখণ্ডকে আবাদযোগ্য করে সভ্যতা গঠনে যে ভাবধারার আশ্রয় গ্রহণ করেছে তা বিশ্লেষণের যোগ্য। নতুন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং বৈজ্ঞানিকগণ যেভাবে সহায়তা করেছেন দার্শনিকগণও সেভাবে তাঁদের চিন্তাধারার মাধ্যমে এই গঠনকার্যে অংশগ্রহণ করেছেন। গঠনমূলক এই যুগের চিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল বাস্তবতা। জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীনভাবে কোনো সমস্যার তাত্ত্বিক বিচার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই যুগের দার্শনিকগণের মধ্যে প্রকট হয় নাই। বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁরা চিন্তা করেছেন। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দার্শনিকদের মধ্যে বাস্তব জীবনের স্বীকৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। এই জীবনবোধে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাগমেটিজম বা প্রয়োগবাদের জন্ম হয়।
১৮৮০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত সময়কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দর্শনের স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা এই সময়ে দর্শন ও মনোবিজ্ঞানে জেমস ডিউই, পিয়ার্স, রয়েস, জর্জ সাণ্টায়ানা এবং আলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেডের মতো মৌলিক চিন্তাবিদদের উদ্ভব ঘটে। উপরোক্ত দার্শনিকদের গ্রন্থরাজি এবং অভিমত দর্শনের সমগ্র ইতিহাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছে। হোয়াইটহেডকে প্রাগমেটিজম বা প্রয়োগবাদী তত্ত্বের প্রবক্তা মনে করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক দর্শনে যে সমস্ত তত্ত্ব সমধিক আলোচিত হচ্ছে তার মধ্যে লজিকাল পজিটিভিটিম বা যৌক্তিক দৃষ্টবাদ এবং লিঙ্গুইসটিক ফিলোসফি বা ভাষা-দর্শনই প্রধান।
তথ্যসূত্র
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬;