Alexandrian School of Philosophy: আলেক্সান্দ্রীয় দর্শন

 গ্রিক সভ্যতার পতনের পর মিশরের আলেক্সান্দ্রীয়া শহর প্রায় হাজার বছর ধরে বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ পর্যন্ত বিস্তারিত কালকে উপরোক্ত কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও সাহিত্যের এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ থেকে ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে এর দার্শনিক চিন্তাধারার সমধিক বিকাশের যুগ বলা হয়। আলেক্সান্দ্রিয়ার দার্শনিকগণ সে যুগের পাচ্য এবং পাশ্চাত্য দর্শনের যোগসুত্র হিসাবে কাজ করেছেন। আলেক্সান্দ্রীয় দর্শনের প্রধান মুখপাত্র হিসাবে দার্শনিক হিরোক্লিসের নাম সমধিক প্রসিদ্ধ। হিরোক্লিসের জন্মকাল সম্ভবত ৪২০ খ্রিষ্টাব্দ। আলেক্সান্দ্রিয়ার দার্শনিকগণ প্লেটোর দর্শন নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্লেটোর দর্শনের নতুন ব্যাখ্যা তাঁরা উপস্থিত করেছেন। হিরোক্লিসের দার্শনিক চিন্তায় প্লেটোর প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। সমস্ত অস্তিত্বের মূলে রয়েছে ‘ভাব’, এ অভিমত ছিল প্লেটোর। প্লেটোর ‘ভাব’-এর প্রতিফলন পাওয়া যায় হিরোক্লিসের ‘ডেমিয়ার্জ’ রূপ ধারণায়। হিরোক্লিসের মতে এউ ‘ডেমিয়ার্জ’ হচ্ছে সমস্ত সৃষ্টি এবং সত্তার মূল। ‘ডেমিয়ার্জ’ আপন শক্তিতে শূন্যাবস্থা থেকে সমস্ত অস্তিত্বকে সৃষ্টি করে।

মূল’ডেমিয়ার্জ’ ক্ষুদ্রতর ডেমায়ার্জকে তার শক্তির বাহনরূপে ব্যবহার করে। এই বাহনদের মাধ্যমেই সকল অস্তিত্বের ভাগ্য ‘ডেমিয়ার্জ’ নিয়ন্ত্রিত করে। আরেক্সান্দ্রীয় দর্শনের ইতিহাসে হিপাসিয়া নামক একজন মহিলা দার্শনিকের নির্মম হত্যাকাণ্ড প্রচণ্ড আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল। এরূপ কথিত আছে যে, খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী জনতা উক্ত হিপাসিয়াকে তাঁর চিন্তাধারার জন্য নৃশংসভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করে।

আলেক্সান্দ্রীয় দর্শনের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মের সঙ্গে দর্শনের মিলন ঘটাবার প্রয়াস। গ্রিক সভ্যতার ধ্বংসের যুগে বিভিন্ন প্রকার পরস্পর-বিরোধী দার্শনিক তত্ত্ব মানুষের মনে একটি অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছিল। এই অবস্থাতে প্রাচ্যের ইহুদি ধর্মের সঙ্গে পাশ্চাত্য দর্শন, বিশেষ করে প্লেটোর দার্শনিক তত্ত্বের সংযোগ ঘটে আলেক্সান্দ্রীয়া নগরে। দার্শনিক ফিলো খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকে জীবিত ছিলেন। তিনি প্লেটোর দর্শনের সাহায্যে বাইবেলের ব্যাখ্যা করেন। ফিলো প্লেটোর ‘ভাব’কে যেমন একদিকে গ্রহণ করেন তেমনি অপরদিকে তাকে বিশ্বচরাচর সৃষ্টিকারী এক বিশাল অগ্নিরূপে কল্পনা করেন। বিশ্বের প্রাণ-অপ্রাণ সমগ্র সত্তার মধ্যেই এই অগ্নির প্রকাশ ঘটেছে বলে ফিলো মনে করতেন।


তথ্যসূত্র

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬;

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال