Alienation: বিচ্ছিন্নতা

 কোনো কিছুর গুণ বা শক্তিতে তার মূল আধার নিরপেক্ষভাবে স্বকীয় সত্তা হিসাবে প্রতিপন্ন করাকে দর্শনে বিচ্ছিন্নতা বলা হয়। সামাজিক অর্থনৈতিক বিকাশে বিচ্ছিন্নতাবাদ যে একটা প্রতিবন্ধকরূপে কাজ করে, সে সত্যকে মাকর্সবাদী দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা কার্ল মাকর্স প্রথমে উদঘাটন করেন। তাঁর মতে মানব সমাজের ক্রমবিকাশে মানুষের শ্রমশক্তি, শ্রমশক্তির বিভিন্ন ফলাফল যেমন- অর্থের উৎপাদন, মুদ্রার আবিস্কার, উৎপাদনের সম্পর্ক ইত্যাদি সবকিছুর আধার হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু কালক্রমে শ্রমের এই ফলগুলোকে মূল আধার-নিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়। শ্রম, মুদ্রা বা উৎপাদনের সম্পর্ক সব কিছুই যেন মানুষ-নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তা। মাকর্সবাদী মতে এরূপ বিচ্ছিন্নতাবাদ সামাজিক বিকাশের একটা বিশেষ স্তরে দেখা দেয়। মার্কসের মতে মানুষের আদি সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার কোনো অবকাশ ছিল না। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংগ্রামের ধারায় উন্নততর উৎপাদন বা জীবিকার্জনের উপায়ের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পতির উদ্ভব ঘটে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমাণের পার্থক্যের ভিত্তিতে সমাজে শ্রেণীবিভাগের সৃষ্টি হয়। শ্রমেরও ক্রমাধিক পরিমাণে বিভাগ ঘটতে থাকে। শ্রমের এক বিভাগ অপর বিভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরস্পর-বিরোধী হয়ে দেখা দেয়। যে হাতের কাজ করে সে আর মাথার কাজ অর্থ্যাৎ চিন্তার কাজ করতে পারবে না। এক শ্রম অপর শ্রমের চেয়ে শ্রেয় কিংবা হীন বলে বিবেচিত হতে থাকে। কায়িক শ্রম এবং মানসিক শ্রম এভাবে বিরক্ত হয়ে পড়ে।


তথ্যসূত্র

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬;

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

نموذج الاتصال