আবর্তন (Conversion)
উদ্দেশ্য
এই পাঠশেষে আপনি
- আবর্তন কী এবং আবর্তনের নিয়মাবলী কী তা উল্লেখ করতে পারবেন।
- বিভিন্ন বচনের আবর্তন করতে পারবেন।
- কোন্ বচনের আবর্তন সম্ভব নয় তা নির্দেশ ও ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
আবর্তনের সংজ্ঞা
যে অমাধ্যম অনুমানে সত্যমূল্য অপরিবর্তিত রেখে একটি বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের পারস্পরিক স্থান পরিবর্তন করে অন্য একটি বচনে উপনীত হওয়া যায় তাকে আবর্তন বলে। যে বচনটি দেয়া থাকে তাকে 'আবর্তনীয়' এবং আবর্তন করে যে বচন পাওয়া যাবে তাকে বলা হয় 'আবর্তিত।
আবর্তনের নিয়মাবলী
আবর্তনের নিয়মগুলি নিরূপ
১। আবর্তনীয়ের উদ্দেশ্য আবর্তিতের বিধেয় হবে।
২। আবর্তনীয়ের বিধেয় আবর্তিতের উদ্দেশ্য হবে।
৩। আবর্তনীয় ও আবর্তিতের গুণ একই হবে ।অর্থাৎ আবর্তনীয় ইতিবাচক হলে আবর্তিতও ইতিবাচক
হবে এবং আবর্তনীয় নেতিবাচক হলে আবর্তিতও নেতিবাচক হবে।
৪। আবর্তনীয়ে যে পদ ব্যাপ্য হয়নি আবর্তিতে সে পদ ব্যাপ্য হবে না।
আবর্তনের প্রকার
আবর্তন দু'প্রকার। যথা
১. সরল আবর্তন
২. ও অসরল আবর্তন।
যে আবর্তনে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের পরিমাণ এক থাকে তাকে সরল আবর্তন বলে।
যে আবর্তনে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের পরিমাণ ভিন্ন হয় তাকে অসরল আবর্তন বলে। A বচনের আবর্তনকে অ-সরল আবর্তন বলে। কারণ A বচনের আবর্তন করলে I বচন পাওয়া যায়। A সার্বিক বচন আর I বিশেষ বচন। তাই তাদের পরিমাণ ভিন্ন।
A, E, I ও O বচনের আবর্তন
এখন A, E, I ও O এই চার রকমের শর্তনিরপেক্ষ বচনকে আবর্তিত করে দেখা যাক কি সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়।
E বচনের আবর্তন
আবর্তনের যে নিয়ম রয়েছে তাতে E বচনের আবর্তন সব সময়ই বৈধ। বৈধ বলার অর্থ এদের আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত উভয়ের সত্যমূল্য এক। যেমন __
E "কোন কাক নয় গরু।' আবর্তনীয়
সুতরাং E. 'কোন গরু নয় কাক।' আবর্তিত
এখানে আবর্তনীয় E বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই ব্যাপ্য। কাজেই উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের পারস্পরিক স্থান পরিবর্তনের ফলে ব্যাপ্যতা সম্পর্কিত নিয়ম লঙ্ঘিত হচেছ না। ফলে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যমূল্যও এক।
I - বচনের আবর্তন
I - কোন কোন ছাত্র হয় কবি।' আবর্তনীয়
সুতরাং I - কোন কোন কবি হয় ছাত্র। আবর্তিত
এখানে আবর্তনীয় ও বচনের কোন পদই ব্যাপ্য নয়। কাজেই উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের পারস্পরিক স্থান পরিবর্তনের ফলে ব্যাপ্যতা সম্পর্কিত নিয়ম লঘিত হচ্ছে না। তাছাড়া এখানে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যমূল্য এক। এ দু'টি বচনের যৌক্তিক মূল্য এক হওয়ায় এদের যে কোন একটি বচন থেকে অন্যটি বৈধভাবে অনুমান করা যায়।
A বচনের আবর্তন
আবর্তন প্রক্রিয়ার সাহায্যে অ থেকে বৈধভাবে অ বচন পাওয়া যায় না। যেমন
A 'সকল গরু হয় চতুষ্পদ প্রাণী।' আবর্তনীয়
.:. A 'সকল চতুষ্পদ প্রাণী হয় গরু'। আবর্তিত
এই অনুমান বৈধ নয় কেননা দু'টি বচন সমমানের নয়। এখানে প্রদত্ত আশ্রয়বাক্য সত্য কিন্তু সিদ্ধান্ত মিথ্যা। কেননা সব চতুষ্পদ প্রাণী স্পষ্টতই গরু নয়। তাছাড়া এখানে ব্যাপ্যতার নিয়মও লঙ্ঘন করা হয়েছে। 'চতুষ্পদ প্রাণী' আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য ছিল না কিন্তু সিদ্ধান্তে তা ব্যাপ্য হয়েছে।
প্রাচীন যুক্তিবিদগণ এজন্য A বচনকে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে আবর্তন করেন এবং একে বৈধ মনে করেন। এই আবর্তনকে 'সীমায়িত আবর্তন' বা 'অসরল আবর্তন' বলা হয়। এ ধরনের আবর্তনে আবর্তনের সকল নিয়ম ঠিক রেখে শুধু পরিমাণের পরিবর্তন করে আবর্তন করা হয়। এই ধরনের আবর্তন নিরূপ __
A 'সকল গরু হয় চতুষ্পদ প্রাণী।' আবর্তনীয়
I.. 'কোন কোন চতুষ্পদ প্রাণী হয় গরু।' আবর্তিত
আধুনিক যুক্তিবিদগণ A বচনের এ ধরনের আবর্তনকে বৈধ বলেন না। কেননা A এবং তার আবর্তিত I বচন সমমানের বচন নয়।
O বচনের আবর্তন
'O' বচনের আবর্তন বৈধ নয়। একটি ও বচন নিয়ে দেখা যাক কেন ও বচনের আবর্তন বৈধ নয়।
O - কোন কোন প্রাণী নয় বিড়াল।' আবর্তনীয়
O - 'কোন কোন বিড়াল নয় প্রাণী।' আবর্তিত
এখানে আবর্তনীয় বচন সত্য কিন্তু আবর্তিত বচনটি মিথ্যা। সুতরাং O বচনের আবর্তনের বেলায় কোন ক্ষেত্রেই আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যমূল্য এক হয় না।